DEHLIJ

পীযূষকান্তি বিশ্বাস

ঘোড়া





ঘোড়ার নিজস্ব রোগ আছে । রাত্রি জাগার চেয়েও ধাঁকড় বিমারী । এমন অসুখ, ঘোড়সওয়ারের স্বপ্ন ছুটে যায় । রাত্রি থেকে ঘাম ছুটে যায়। আস্তাবল থেকে দূরে, ছিটকে বেরিয়ে যায় হোমো-সেপিয়েন্স । এমন অসুখকে ঈশ্বর আর ইওহিপ্পাসকে নশ্বর করে ছেড়েছে পৃথিবীর দুরন্ত র‍্যাঞ্চার । প্রাগ-ঐতিহাসিক দিন থেকেই প্রেইরির সবুজ চিরে ছুটিয়ে চলেছে তারা । রাউন্ড-রক থেকে অস্টিন,  অস্টিন থেকে হিউসটন,  হিউসটন থেকে চন্দ্র অভিযানে । এই সভ্যতার সমীকরণে, বিভাজ্য যা কিছু তা গণিত, ভোজ্য যাকিছু তা গণিকা, ভাগশেষ যা পড়ে থাকে তা মঙ্গল । মহাকাশ যাত্রার এমন দিনে কে যে কাউ আর কে যে কাউবয় এই ঘুমঘুম চোখে ভালো ঠাহর হয় না । এহেন ভূতের অফ-বিট চিত্রকল্প আর এক স্যুররিয়াল রাত্রির এক নাছোড়বান্দা দংগল । কংক্রিটের বুকে এমনই ভার্চুয়াল যাপনে যখন একাই লিখি সোর্সকোড, কম্পাইল করি,  একাই নিংড়ানি দিই, জল, মাটি, সার, দিবারাত্রি এককরে । ঠিকানা বলতে কাজ, স্বপ্ন বলতে রাত,  নেশা বলতে কোড । ঘুম যায় ঐ চাঁদ । এক উন্মুক্ত কিউবিক্যাল আর কাঁচ-বন্ধ জানলা নিয়ে শারীরিক অফিস-যাপন । চিবুকে হাতদিয়ে একচোখে দেওয়াল, অন্য চোখে ডেস্কটপ । সঙ্গে থাকে জ্যোৎস্না, রাত্রিযাপনের সাথী । বাইরে হাওয়া বইছে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, কাচের জানলায় তেরচা আলো পড়ছে লাইট টাওয়ার থেকে, আউট-কাট  পশ্চিমে একটা দেওয়াল উঠে যায়, অনেক উচ্চে, কনটিউরা টাওয়ার । কোথাও কোন আস্তাবল আছে মনে হয় অথবা আশেপাশে কোথাও আস্তাবল ছিলো । জানলার ওপারে দেখা যায় মিলিওন বৎসর আগের আধভাঙা চাঁদ,  আর তৃণভূমি জুড়ে ডাইনোসর যুগের সুদীর্ঘ ঘাস । শিশির এক ধ্রুবক । টাইম  এক্সটেণ্ডেড টু লিমিট ।  মসৃণ ত্বকের উপর সাজিয়ে রেখে রেশম ঢলান , গর্দন থেকে পিছলে যায় অভিকর্ষ , বলিষ্ঠ বক্ষ নিয়ে টগবগে ঘোড়ারা এখনো জেগে আছে । এক স্বপ্নের দৌড়ের প্রতীক,  শৌর্যের, বীর্যের স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে এতকাল একইভাবে দাঁড়িয়ে । ঘোড়া ঘুমায় নি । বিস্তীর্ণ প্রেইরির তৃণভূমিতে এই ইওহিপ্পাস একই ভাবে তাকিয়ে সে ঘাসের প্রতি,  আর চিরসবুজ চিকন ঘাস একইভাবে তাকিয়ে ঘোড়ার প্রতি । শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেল । ইকো-সিস্টেমে দাঁড়ানো এক পরস্পরের অবস্থান । এক পিরামিডের মানচিত্র । উচ্চতায় এক, ভূমিতে এক, আর তির্যকে দাঁড়িয়ে আছে কাল । এতযুগ পার হয়ে গেল একুয়াস ক্যাবিলাস, এখনো সে মাত্র এক যাপনচক্র বিশেষ । অভিব্যক্তির অন্তরালে ঘোড়া এখনো দৌড়ে যাচ্ছে দেওয়ালে দেওয়ালে ।


জ্যোৎস্না



এই কিউবিক্যালে আমি আর জ্যোৎস্না বসি । কসমোপলিটনের দিনরাত্রির ডিটেলস এ যাবার আগে একটু ভূমিকা ধরিয়ে দিই । অফিসকাছারী তো থাকেই । আমি, ওরফে একজন ক্লাউড আর্কিটেক্ট, আর জ্যোৎস্না ওরফে হাই-হিল তন্বী কাজল নয়না ইভেন্ট ম্যানেজার, পদবী জুড়ে দিলে জ্যোৎস্না শর্মা । দুধ-ধবধবে গাড়োয়াল তনয়া । কিউবিক্যাল, ওরফে, অফিসের পর্দাহীন ওপেন কেবিন । একই টেবিল । পাওয়ার সকেট, ইথারনেট কানেকশন থাকে । সকেটে ল্যাপটপ জুড়ে রাখা আছে । সামনে টাঙ্গানো রয়েছে প্রোজেক্ট শিডিউল । কিউবিক্যালে আমি আর জ্যোৎস্না । কখনো এক, কখনো দুজন । দেখি একে-অপরের ডেস্কটপ মাঝে মধ্যে যদি না ওয়ালপেপার মুখ ঢেকে ফেলে । মাল্টিমিলিয়নার প্রোজেক্ট আমাদের । গুড়গাঁও চিরে হিংস্র গতিতে ছুটে চলেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে-আট , সেক্টর থার্টি টু । এস-ই-জেডে জলবায়ু বিহারে আমাদের অফিস । আমাদের সময় জ্ঞান দিতে প্রোজেক্টের টাইমলাইন দ্রুত এগিয়ে আসে । দেওয়ালে টাঙ্গানো আছে পাঁচ পাঁচটি ঘড়ি । দিল্লি, নিউইয়র্ক, টোকিও, দুবাই, লন্ডন । সুপার স্পীডে প্রোজেক্টের কাজ চলছে । ক্লাউড কম্পিউটিং আর অফিস ডিজিটাইজেশন । বেহতরীন ইন্নোভেশন । পৃথিবীর আধুনিকতম প্রযুক্তির যোগসাধনা । হাই প্রোফাইল প্রোজেক্ট টুয়েন্টি ফোড় বাই সেভেন, এক্রস দ্যা গ্লোব । বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট । মূলত: ক্লাউড মাইগ্রেশনের কাজ করি আমরা । আমিই মাইগ্রেশন লিড করি । ক্লাউড আর্কিটেকচার বানাই । আমার টিম মেম্বারদের কেউ আমেরিকা, কেউ দুবাই, জাপান ইংল্যান্ডে কাজ করে । সার্ভারে সার্ভারে টিক টিক করছে হার্ট বিট ,  যার জিন রয়েছে সুদূর যার সদরদপ্তর আরমংক,  নিউ ইয়র্কের ডাটা সেন্টারে । আর দিল্লি এন-সি-আরের প্রজেক্ট অফিসের দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘড়ি । ডি-এল-এফ টাওয়ারের উপরে ঐ নেভিগেশোনাল লাইট দেখা যায় ! রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞানে এখন দিল্লির ঘড়িতে বাজে রাত এগারোটা উনত্রিশ ।


পুঙ্গি



অথচ এইটাই বিজনেস আওয়ার । পিক টাইম । বিজনেস সামলাতে আমার একজন ইভেন্ট ম্যানেজার লাগে । ক্লায়েন্টের সঙ্গে থাকে লাগাতার বাতচিত করতে হয় । মিটিং, কলস, ভয়েস, টেক্সট, অনস্ক্রিন প্রেজেন্টেশন, সেমটাইম চ্যাটিং তাকে সামলাতে হয় । ম্যানেজ করতে হয় সুদূর আটলান্টিক । জ্যোৎস্না ইভেন্ট ম্যানেজারের কাজটা করে । অফিস ফ্লোরে কোন দেওয়াল বা পর্দা দেওয়ার চল নেই । আমাদের ওপেন কিউবিক্যাল । ওপেন নামের সঙ্গে একটা ম্যানেজমেন্ট আট্যায়ার লটকে থাকে । যেমন থাকে ব্যাজ । ব্যাজ মানে,  চৌম্বকীয় পট্টি লাগানো পরিচয় পত্র । গেট খুলে ভিতরে প্রবেশের আইডেন্টিটি । আইডেন্টি গলায় ঝোলানো জ্যোৎস্না জেন্ডার ইন্ডিপেন্ডেন্ট একটি রোল । জেন্ডার এটাচ করলেই ঘটে যায় বিপত্তি, বড্ড ডিস্ট্রাকটরের কাজ করে । অফিস-কর্মে ব্যাঘাত ঘটায় । রোজি-রোটির উপরে তুলে দেয় কঠিন প্রশ্ন ।  কিউবিক্যালে, তাই চেষ্টা করি ওর বুকের দিকে না তাকাতে । আই কার্ডেই ওর মুখ দেখি । ওর ঠোটে ঘন লিপস্টিকের আবরণ,  ভ্রূ প্লাক করা, পায়ে হাই হিল,  উর্ধাঙ্গে টাইট টপ, নিম্নাঙ্গে মিনি স্কার্ট । দেখতে চাইলে অনেকটাই লং লেগ দেখা যায় । বড় মন দিয়ে কাজটা করে মেয়েটা । প্রতিটা ক্লায়েন্ট কলে আমাকে সাপোর্ট দেয় । ওর গ্রে ম্যাটারে একটা ন্যাচারাল ইন্টেলিজেন্স,  ওর চোখে হাজার পাওয়ারের ঝিলিক ।ওর মুখে ভেসে ওঠে হাডসনের ঢেউ, ওষ্ঠে খেলে যায় লাস-ভেগাসের লাস্যময়ীতা । ওর কাজল চোখের সন্ধ্যা আলোয় আমি সূর্য ডুবে যেতে দেখি । দিনের ক্লান্তিতে মেপে দেখি কর্মজীবনের প্রবহমানতা,  রাত্রিযাপনের নিঃসঙ্গতা আর দ্রুত খতম হতে থাকা চল্লিশের কথা । মধ্য জীবনের বসন্ত থেকে দ্রুত পাতা ঝরে যায় । রাত আসে । আহা,  রাত,  পর্ণমোচী রাত,  যেখানে ভাঙ্গতে চাই শিল্পের সীমানা আর সুপার ফাস্ট ক্যারিয়ার থেকে চাই ক্ষণিক স্থিরতা , যান্ত্রিকতার থেকে চাই একমুহূর্তের মুক্তি । জব ক্যারিয়ার নাকি ব্লাকহোল ?    গর্দনের উপর সদা লটকে থাকে তলোয়ার । যার কোন খাপ নেই, খাম নেই, খেয়াল নেই । কখন যে খসে যায় পান থেকে চুন, কখন যে বেরিয়ে পড়ে এডামেন্ট ডিফেক্ট,  কখন যে এস্কেলেট হয়ে যায় ক্লায়েন্ট । আর সুরক্ষা বলয় থেকে এক্সপোজ করে দেয় পিঙ্ক স্লিপ । বিভীষিকাময় কর্পোরেটের কখন যে অচানক পুঙ্গি বেজে যায় । 


বার্বিডল

জ্যোৎস্নাকে দূর থেকে বার্বি ডল লাগে । কাছ থেকেও বোধহয় তাই । অথচ তিন হাত দূরত্বে সে যখন গালে হাত দিয়ে কাজ করে , কল সামলায়, ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করে , খিলখিল করে হেসে ওঠে । গালের উপর লালিমা খেলে যায়,  ওষ্ঠে লেপটে থাকে কেটে রাখা দুটি রেড চেরির ফালি । মনে হয় কোমল পদ্মপাতার জ্যোৎস্নাকে একটা চুমু খাই । জ্যোৎস্না কথা বলে চলে ঘড়ির মতো টিক টিক,  ভিতরে ভিতরে সে যেন নমনীয় হয়ে আসে । এইরাত্রি,  এতো গোপন রাত্রি তার ভিতরে এতো সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে । ও তা নিজেই জানে না । প্রোজেক্টের কাজে দেরী হয়ে যায় । মাল্টি-ন্যাশনাল, মাল্টি-জিওগ্রাফিকাল কল থাকে । এই কিছুক্ষণের ভিতরেই একটা মিটিং আছে । একাউন্ট সফটওয়ারের মডুউলে একটা ডিফেক্ট এসেছে । ক্লায়েন্ট বার বার বলছে, হাই প্রায়োরিটি বাগ,  সিভিয়ারিটি-ওয়ান ডিফেক্ট । টেবিল চাপড়ে বলছে, এখুনি এর ফিক্স দিতে হবে । হায়,  সমস্তই তো হাই প্রায়োরিটি,  ক্লায়েন্টের প্রত্যেকটি কলই ইম্পরট্যান্ট । এখুনি করে দিতে হয় । যখনতখন । দিবারাত্রি । ভিতরে ভিতরে ভাঙ্গছে জ্যোৎস্না , ভিতরে ভেঙে যাচ্ছি আমি । আজও বোধহয় ক্লায়েন্ট ডেলিভারিতে লেট হয়ে যাবে । রাত বাড়ছে । মনে মনে বলি দূর ছাই, গুলি মারি এই চাকরি । বাইরেও একটা পৃথিবীী আছে। যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন । ব্যাল্যান্স বিগড়ে যাচ্ছে । সংসার কল্পনায় ছিঁড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বিবেক । সমাজকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, পরিবার কে দেওয়া বিশ্বাস, কোম্পানিকে দেওয়া অঙ্গীকার, আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে । ডেস্কটপের দিকে তাকাই । স্লিপ সিগন্যাল, স্ক্রিনের পিক্সেলে বাতি নিভে গেলো । বাইরে জেগে আছে ল্যাম্প পোস্ট , ক্যাফেটেরিয়ার জানলায় নীলাভ আলো । কাকে কি কথা বলি । কাকে মনের কথা বলি ?  ক্লায়েন্ট কলকে প্রায়োরিটি দিতে দিতে নিজের কথা শেষ, আই-কার্ড দেখে দেখে শুক্র-থলী শুঁকিয়ে গিয়েছে । তবু দেখি জ্যোৎস্নার আই-কার্ড ।  পাশে রাখা বোতল থেকে একটু জল খায় জ্যোৎস্না । নেক্সট মিটিঙের জন্য পি-পি-টি রেডি করে রাখে ।  তার ডেস্কটপে উকি মেরে দেখি । ওয়ালপেপারে প্যারালাল দৌড়াতে থাকা তিনটে ঘোড়ার একত্র ছবি । ব্যাকগ্রাউন্ডে সবুজ তৃণভূমি । ঘোড়া । সাদা, দুধ-ধবধবে, মসৃণ ত্বক, টগবগে শরীর । জিজ্ঞাসা করেছিলাম একবার – “এই ঘোড়াগুলোর কি মানে ?  ডেস্কটপে কেন লাগিয়েছ ? এর কি নিজস্ব কোন কারণ আছে ?” জ্যোৎস্না চোখের ভিতর গভীর চোখ ঢুকিয়ে বলেছিল, “এক্সকিউজ মি !” । দেখছিলাম তার হাত কাঁপে, হাতের রোম খাড়া হয়ে যায় । যথারীতি তাই জানা হয় নাই , এই তেজস্বী ঘোড়ার সঙ্গে সাথে রাত্রিযাপনের কোন সম্পর্ক আছে কি না । নারীর শারীরিক জীবনচক্রে তার ভূমিকা কী । নোটিফিকেশনে পপ আপ আসে,  এখুনি মিটিং শুরু হয়ে যাবে । ঘড়ির কাটায় এখন আই-এস-টি, এগারোটা আটান্ন । আই-এস-টি টাইম মানে প্রকৃতই ধরে নেবার দরকার নেই যে মাঝরাত,  পৃথিবী ঘুরে আসছে আহ্নিকগতির অনুকূলে । নিউইয়র্কে দুপুর গড়িয়ে দুটো আটাশ । সকাল হচ্ছে জাপানে তিনটে আটাশ । দেওয়ালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পাঁচটা পাঁচটা টাইম-জোন । আকাশকে মেঘে ঘিরে ধরেছে । অফিস চত্বরের লাইনে লম্বা লম্বা দাঁড়ানো ইউক্যালিপটাসের পাতার ভিতর দিয়ে ঘোড়ার চালে দৌড়ে যায় পাগলা হাওয়া ।  


ঘমাসান





রাত বাড়ে,  বাড়ছে রাত্রির নেশা , শালা পাগলা হয়ে আছে ওয়ার্ক্যালহোলিক ভেটেরান ভাইস প্রেসিডেন্ট । খুব ইম্পরট্যান্ট ডেলিভারি চলছে । লাইভ যাচ্ছে মাইগ্রেশন । সিনিয়র ম্যানেজমেন্টদের কেউ বাড়ি যায়নি আজ । যেনতেন প্রকারেণ আজ লাইভ যাবে প্রোজেক্ট । বোর্ড-রুম শাসন করা সাম্রাজ্যবাদী ভাইস প্রেসিডেন্ট আর টপ ম্যানেজমেন্ট, একজোটে হালুম করার অপেক্ষায় । আউটলুক এক্সপ্রেসে বাড়ছে আন-রেড ইমেলের ভিড়, ইমেলের ভিতরই রয়েছে সর্ষে । ভূত । মেল খুললেই রয়েছে একটার পর একটা টাস্ক । একটা টাস্ক ফেল হলেই শালা,  চার্জ ।  জব্বর বাঘের হালুম । প্রোজেক্টে আগুন ধরে যায় । যে কোন সময় যে কেউ ফায়ার হয়ে যেতে পারে । ফায়ার ওরফে চাকরি থেকে খাল্লাস । এক একটা মেল তাই হাড় হিম করা পলিটিক্স । ধমনীতে এক গঙ্গা আড্রিলানিন বয়ে যায় । রক্তচাপ বাড়ে । এমনি এমনি কি শালা মু-মাঙ্গা স্যালারী আসে ? ডলারের পর ডলার । ডলার একটা মস্ত বড় পলিটিক্স ।  এটা কোন নাইট শিফট নয়,  এটা কোন অফিস আওয়ার্স নয় । তবুও প্রত্যেক ব্যক্তিকে এজাইল হয়ে উঠতে হয়, ব্যক্তি ব্যক্তিকে অতিক্রম করে । ব্যক্তি ব্যক্তি কে ঘৃণা করে । ব্যক্তি ব্যক্তি কে পণ্য করে । একটুকু সুবিধের জন্য মানুষ মানুষের লাইন কেটে দেয় । পুঙ্গি বাজিয়ে দেয় প্রিয়তম দোস্তের । এখানে কেউ কাউকে জোর করেনা । এলজিবিটি এগ্রিমেন্ট সাইন করে ঢুকতে হয় পে-রোলে । সাইন করতে হয় নো হ্যারাসমেন্ট ক্লজ । নিজেরাই খুলতে হয়, অ্যাসপিরান্টরা নিজেরাই মুখ খুলে চাকরিতে আসে । যত বড় হা,  তত গুচ্ছ ডলার দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় মুখ । কোন ব্লো জবের সিন নেই । স্মল স্টেটমেন্ট,  স্মল টক । না বলার রাস্তা নাই । আমার এই হলো কর্মজীবন , এই হলো রাত্রিযাপন আমার রোটি, কাপড়া , মকান । আমার মতো দিনরাতজাগা কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ছে, পশ্চিমের দেশের আউটসোর্সিং বাড়ছে । বিজনেস ইভেন্ট খুবই কমপ্লেক্স হয়ে যাচ্ছে । ম্যানেজ করা মুশকিল হয়ে পড়ছে । তবুও এস্ট্যাবলিশ করছি নিজের সংগ্রাম । ঘমাসান জারি । দাগ রেখে যাচ্ছি জমিতে । রাত বাড়ছে । চাঁদ বাড়ছে ।  সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে অজস্র জ্যোৎস্না । প্রত্যেকটি জ্যোৎস্নার মত, আমি নিজেই রিপ্লিকেট হচ্ছি । জ্যোৎস্নার জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ছে টেবিলে টেবিলে, ডেস্কটপে, ওয়াইফাই, ইন্ট্রানেট, ইন্টারনেটে । সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে ওয়ালে ছায়াময় ছড়িয়ে যাচ্ছে জ্যোৎস্নার উদ্ধত বক্ষের আত্মবিশ্বাস । জ্যোৎস্না যেন নিজেই একটা স্টেটমেন্ট । আমার বানানো ক্লাউড আর্কিটেকচারে জ্যোৎস্না ফুটপ্রিন্ট ছড়িয়ে যায় ।


সেক্স ও সিক্স প্যাক





মাঝে মাঝে ঠোকাঠুকি লেগে যায়, আগুন জ্বলে না । জ্যোৎস্নার ভিতর আগুন, অন্দরমহলে জ্বলে যায় তার দুরন্ত শিখা । জ্যোৎস্না যেন এক সফটওয়ার । এই রূপ যৌবন নিয়ে রাত্রিকে জ্যোৎস্না আলোকিত করে, পুলকিত করে । আমার ঠিক জানা নেই জ্যোৎস্না কারো বধূ কিনা, কারো প্রেমিকা কিনা । শুধু এইটুকু আমি জানি, ল্যাপটপে আমি ডিজাইন বানাই, তাতে জ্যোৎস্না ঢেলে দেয় মধু । জ্যোৎস্না  আমাকে একদিন সত্যিই ডেস্কটপের ওয়ালপেপারের তিনটি ঘোড়ার রহস্য শোনায় । স্বপ্নের ভিতর দৌড়াতে থাকা এই ঘোড়াগুলোর কথা সে বলে । তেজী,  স্বাস্থ্যবান,  পেশীবহুল অশ্বের কথা । আস্তাবল ভেঙে টগবগিয়ে আসছে যেন তার স্বপ্নের ভিতরে । সেখানে রাত্রি নেই, ক্লায়েন্ট নেই, ক্লাউড নেই, ডিফেক্ট নেই , মিটিং নেই । শুধু আছে যোনীর ভিতরে খসে যাওয়া জলের জীবনচক্র , সুষুম্নাকাণ্ডের সামগ্রিক অবচেতনা । মনস্তত্ব । আমি জানি, এসব আমারই ভার্চুয়াল রূপ, আমারই সোর্স কোডে লেখা সফটওয়ার । ভার্চুয়ালকে চিনতে আমার কষ্ট হয় । আমাকে ফিরতে হবে ফিজিক্যালে । এইসব কৃত্রিম মায়াজাল । রক্ত নাই, মাংস নাই । ভার্চুয়াল অবয়ব থেকে আর্কিটেকচার বের করে এনে তাতে স্থাপন করতে হবে রক্ত, সিক্সপ্যাক করে তুলতে হবে মাংস । যেখানে রাত্রির উপস্থিতি নেই, ডলারের দবদবা নেই । সেখানে ঘুম থেকে স্ট্রেয়েট বাইরে ছিটকে আসবে ধবধবে লালসা । এইখানে সজাগ প্রহরীর মতো লিড করে বের করে আনতে হবে ডিফেক্ট ফিক্স, কোডের ভিতর কোড, সোর্সের ভিতর সোর্স ।জ্যোৎস্নাকে খুব খেটে কাজ করতে হয়, জবাবদিহি করতে হয় । সমস্ত ডিফেক্টের রুট কজ এনালাইসিস দিতে হয় । আজও তার সমস্ত জবাব দিলো । মিটিং শেষ হল । সাকসেসফুল মাইগ্রেশন । গো-লাইভ ডান । এক্সিলেন্ট জব । আমার মুখেও তৃপ্তির হাসি । ক্লাউড থেকে ডাউনলোড হচ্ছে বাইটস । মেগা বাইটস, গিগা বাইটস, টেরা বাইটস, পেটা বাইটস । ডাটা ট্রান্সফার হচ্ছে সোর্স থেকে টার্গেটে বিদ্যুৎ গতিতে । প্রোজেক্ট ম্যানেজার খুশ ।  ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খুশ ।  কাজের ছুটি হবে এখন । এইবার বোধ হয় আমরা আজকের মতো সাইন অফ করতে পারি । রাত এখন দুটো বেজে পনের মিনিট ছত্রিশ সেকেন্ড ।  টেক্সাসের তৃণভূমিতে ফুল ফুটেছে ম্রিয়মাণ রোদ্দুরে । সেখানে বিকেল পাঁচটা ছয় ।  


No comments