DEHLIJ

জপমালা ঘোষরায়

পাঠকামি

পীযূষকান্তি বিশ্বাসের পাঠ-প্রতিক্রিয়া





সবার ভিতরেই একটা  আয়না থাকে, তার ভিতরে যত ঢোকা যায়, তার তার গভীরতা বাড়ে। ইন-ফ্যাক্ট তলা হাতড়ে দেখলে বোঝা যায় অথৈ জল । একটা আয়না আর মানুষের কতটা দূরত্ব ? লক্ষ যোজন । তাই না ? সেই তুলনায় বিড়াল অনেক কাছের । আপন হাতের স্পর্শে সে হয়ে ওঠে পরিবার । অন্ততঃ একটা জিনিসকে সে দুমড়ে মুচড়ে রিপ্রেজেন্ট করে না । আর রুমাল ? সে তো পুরো একটা ধোতি থেকে ছিন্ন অভিজ্ঞতা । নিজের অস্তিত্ব কে বারবার উসকে দেয় ।  তার উড়াল নিয়ে প্রত্যেকজন একটা চরিত্র নির্মাণ করতে চান । সে হতে পারে, সুখী গৃহিনী, লাস্য রমণী, স্বপনহরিণী ।  তবুও, কেন যে নারীর কাছে বারবার ফিরে গিয়ে দেখি, সেও একজন পুরুষ । আর অন্যদিকে ক্লিনিক্যালি প্রুভড , একজন পুরুষের কাছে পুরুষ একজন পুরুষ , তাঁর কাছে কোন বিড়াল নেই ।  

সেইদিক থেকে জপমালা ঘোষরায় একজন আয়না , কবির আয়না । তার নিজস্ব দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা একটা রুমাল নিয়ে আজকের এই পাঠকামি । ইনফ্যাক্ট , তাকে নিয়ে পাঠ অনেক আগেই করা হয়েছে, কিন্তু পুনঃপঠিত সেই পরিচয় পর্বের কথা কিছুটা আলাপ করা যাক । 

সেদিন, মেঘলা হবে । মুমবায়ের আকাশে রক্ত স্রোত, নাকি ব্লাড বাথ । শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে । সেই না শুনে চৌরাস্তায় মস্ত একটা কালো ষাঁড় তার শিং নামিয়ে রেখেছে । স্থির , বোবা, বধির । টেলিফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে সেই খবর নিয়ে একটা রেডিও একটিভ সিগনাল তখন দিল্লিস্থিত কিদোয়াই নগরে এসে পৌঁছালে ।  একজন নওযুবককে দেখা যায়া পুরানো টিপে টিপে করা ফোন কানে দিকে উচ্চ স্বরে কাউকে কিছু বলছেন । "তো ষাঁড়টা শিং নাবিয়েছে, তো কি হয়েছে । , এই তো নিবেশ করার সময় । " ।  তার হাতে একটি আধাভাঙ্গা ল্যাপটপ, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ । কপালে হাল্কা ঘাম । "আর এক খেপ মেরে দেন" বলে সে ফোন কেটে দিলো । ল্যাপটপে বোধহয়,  ফেসবুক অন আছে । কারো মেসেজ এলো মনে হয় । শূণ্যকালে কারো কামেন্ট এলো ।  কবি জপমালা ঘোষরায় তাঁর বন্ধু । তাঁর কোন মেসেজ এসেছে । 


লোকটা, বললো ; এই সব শেয়ার বাজার দালালি করে পেট চালাতে হয়, কিন্তু পেটই তো সমস্ত কিছু না ।তাঁর নেশা বইমেলা, শূণ্যকাল ও কবিতা । বাংলার কন্যা কবি জপমালার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেন ,  শূণ্যকালের সম্পাদক ও কবি দীপঙ্কর দত্ত । যার পেশা ছিল শেয়ার বাজার আর নেশা ছিলো ভারতীয় যাদুতন্ত্র ও ডাকিনীবিদ্যা । আজ কবি জপমালা ঘোষরায়ের "বিড়ালের 'শ', রুমালের 'স্ব' " বইটি পড়ছি, সেই বইটি আমি বইমেলা থেকে সংগ্রহ করি । 


আজকের পাঠঃ "বিড়ালের 'শ', রুমালের 'স্ব' "


বিড়ালীকরণ


পােস্টমডার্ন বিড়ালের সন্ধান করতে গিয়ে যােড়শ শতাব্দীর সঙ্গে সম্পর্কসূত্র থেকে অভিব্যক্তি অভিযােজন খুঁজে চলেছেন হাংরি ও নব্বই-এর দুই ডাকসাইটে আলােচক। আমি অনেক উঁচু কার্নিশে বসে থাকতে দেখেছি রমযােগী বিড়ালতপস্বীকে। কার্নিশ থেকে লাফাব লাফাব বলেও লাফায়নি কোনােদিন। ঠেলায় পড়লেও কেউ কেউ। স্বেচ্ছায় সন্তর্পণে উঠেছে গাছের উঁচু ডালে। বক শিকার করে আছড়ে খেয়েছে। ছাতা টর্চ জলের বােতল ভুল না করা সাবধানি মানুষের মতাে মাছ খেয়ে ফিরে গেছে। নীচে। আমি নিজের চোখে সাদা কালাে ছােপ-ছােপকে দেখেছি ইদুর শিকার করে খেয়ে ফেলে শরীরটা একটু ফুলিয়ে নিয়ে গা-ঝাড়া দিয়ে শিকারের পাপ ঝেড়ে ফেলতে। গাছের গােড়ায় ঝরিয়ে দিতে কিছু শিউলি ফুল। | কোনাে প্রতিবাদ করিনি অথচ কী এক বিপন্ন ক্ষরণের ভিতর থেকে ঠাকুমার। প্রত্নবিড়াল আমাকে বিড়ালে পরিণত হতে বলল। শনিদৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষার জন্য আমাকে ক্যাটসআই পাথর ধারণ করতে বলল।


##

আসলে, বিড়াল নিয়ে অনেক কিছু ভাবা যায় । তাকে ভাবা যায় বাঘের মতো । অথবা তাঁর থেকে অধিক মাসীর কথা । এইভাবে কি মনে পড়ে না ,  বাঘের থাবার কথা ।  বাঘ হোক বা বেড়াল তাঁর একটি সমীকরণ আছে আছে, তাকে অস্তিতব রক্ষার দাবীতে মাছ খেতে হয় । নইলে জাত চলে যায় । কিন্তু জিনিসটা এতোটাও কাছের না । ভূমি থেকে সব সময় কাছে দেখালেও, আসলে আকাশ থাকে তার নিজ দূরত্বে । যে ভাবে আয়না ডুবে যায় আকাশ নামক গভীরে ।  


পরের দুটি কবিতা দেখে নিই আকাশচুম্বনেরঃ 



আকাশদেখা

আকাশের সঙ্গে দেখা এবং মনােলগ। কডি না, তেইশ বছর পর ঢােক গিলে স্মৃতিমেদুর হওয়ার চেষ্টা। কুয়াশা এবং হেমন্ত মাঠকে দিব্যি মনে আছে আর কলেজের করিডােরও। তুই শাক দিয়ে মাছ ঢাকছিস, আমি ঢেউ দিয়ে ঢাকছি মাৎস্যন্যায়। না, না, কোনাে যুক্তি নেই, যুগটা প্রযুক্তির।। চোরাস্রোতের মতাে থুতু গিলছি অথবা থুতুর মতাে চোরাস্রোত।

একরকমের জ্যাকেট হয় যেটা দুই দিকেই সােজা। একরকমের চশমা হয় যার নাম থ্রি ডি গ্লাস। বাকির খাতায় একটা শূন্যও যদি বাড়াই ঋণ বেড়ে যাবে। তার চেয়ে ঋণীই থাকি আজীবন। এই থাকার অন্য কোনাে নাম দিই।।

তাের চুলে এখন শুভ্র দায়বদ্ধতা। এখন তুই অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক। তুই-ই একদিন আমাকে বলেছিলি নির্লিঙ্গ নগ্নতা... বন্ধুত্বের নিউক্লিয়াস ইত্যাদি। আমি বানানটা পারলেও মানেটা বুঝিনি। ওয়ারবিহীন দুটো বালিশ ভিজে গেছিল অকাল বর্ষণে। বালিয়াড়ি ঢিপিগুলাে ক্রম ক্ষয়িষ্ণুতা...ইতস্তত ওড়াউড়ি। জাতীয় সড়কের নাম ছিল ধানসিড়ি। নদীর ব্যাপ্তি এবং বহমানে আবহমান খড়কুটো ভেসে গেল। না, না, কোনাে যুক্তি ছিল না। যুগটা প্রযুক্তির।।

এখন আমার মাৎস্যন্যায়ী আবেগের বেগ থেকে তুই তুলে নিচ্ছিস মাত্র কয়েকটা অনাড়ম্বর ঢেউ। তাের কি দেয়ালে পিঠ ঠেকছে আকাশ? স্যরি ইয়ার! ঘুরে গিয়ে পাক খেয়ে বুমেরাং হয়ে যা।


অতিবেগুনি


অতিবেগুনি অতৃপ্তিগুলাে আমার যাপনে মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে আমি কালাে হতে হতে কালশিটে হয়ে যাইতবুও সত্তার গভীরের ঘােলাজল নিয়ন্ত্রণ করতে সংগ্রামের গ্রামার শিখে নিতে খাড়া রােদে দাঁড়িয়ে বেগুনি রশ্মি গিলে খাই। কালশিটে ত্বক ঘামে। চিকচিক করে ওঠে কষ্টিপাথরের ঠান্ডা ও আবদ্ধ ঈশ্বর যেন আমাকে আটক করে আমারই কাছে মুক্তিপণ রাখে। আমি উদরনির্গত ওঁ আর হৃদয়নিৰ্গত হিং-এ আটকে থাকি।


আমাদের পাখমানুষী স্বভাব এয়ারলাইন্স ধরলে উড়মান কয়েকটা লেজুরখসা পালক ডানাদর্শনে পরিণত হতে হতে দেরিদা নেরুদা ফেলুদা হয়ে বাবানাম কেবলম খিস্তিমারা কবিতা ও আপডেটেড উত্তরসূরি। প্রতিদিন যে যাকে খুশি মাজা ধরে... |


তার চেয়ে বরং সজোর লাথিতে কার্টুনের ছবির মতাে ছেতরে যাওয়া ভালাে। পিছনের তেল ও আগুন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তাে রকেটের বিজ্ঞাপন পৌঁছােতে হবে। সেন্ট্রিপেটাল ও সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের বাইরে। আপাতত ছিদ্রিত ওজোন স্তর দিয়ে। অনুপ্রবেশ করছে যেসব ছিদ্রান্বেষী, তাদের দূষণমুক্ত করে নেওয়া যাক।


## 

আকাশপাতাল নিয়ে ভাবতে ভাবতে , পোস্টমডার্ণ দুনিয়াটা ঝনঝন করে বেজে ওঠে । বেজে ওঠা আধুনিকতা তার সীমাবন্ধনে ডুকরে ওঠে । ফাকফোকর চায় । অতিবেগুনি রশ্মি সেই ফাকফোকর খুঁজে পায় । সেই জন্মের থেকে বিভিন্ন ফোরামে আধুনিকতার পাঠ শুনে আসছি । বুঝতে পারি নাই। বোঝার আগেই তার সীমানায় জল ঢুকেছে । সোসাল মিডিয়া এমন জল ঢুকিয়েছে, তাতে  উত্তর-আধুনিকতা ঘুঁচে গেছে । দীপঙ্কর বলতেন, পোস্টমডার্ণ ইজ ওল্ড । আমি এখন বুঝি পোস্ট মডার্ণ ইজ ডেড । উত্তর-আধুনিকতা মরে যাবার আগে তাই আমরা শেষ কিছু কবিদের পড়ার সৌভাগ্য পেলাম । 



মৌতাতীয়


আমি ঠিক যেমন ঘরােয়া ওরাও ততটাই খাচোয়া। হৈচৈ করা কিছু সমস্যা নেই।


নতে মানতে মেনেই নিয়েছে বরাদ্দ ঘাসবীজ। এখন সবাই যথেষ্ট মানানসই রবি। কিরের চাবি ভাঙার গানে কত তালা যে ভাঙল! অন্ধকারের স্নায়ুতন্ত্রে সাদা আলোর। জালিকা রবিপরবর্তীদের ধমনিপথে মিশে যাচ্ছে... মােহনবাঁশি থেকে মােহনার দিকে। খাঁচার জালিক বিস্তারে ঐন্দ্রজালিক চুমুতে পাখিদের বুননঠোটে বন্দরের বন্দনাগান...


দ্রোণাচার্যের ওয়ালম্যাট-এ যুদ্ধবাদ এত স্পষ্ট যে লীলা অবলীলা রাজনীতি পুরুষতন্ত্র একাকার হয়ে থাকে। নারীদেবতায় সমর্পিত আর্যপুরুষ নারীরই পায়ের নীচে নতজানু হয়ে আবার নারী জয়ের মন্ত্র উচ্চারণ করল... রূপং দেহি..জয়ং দেহি... যশাে দেহি.. তবু জেনেশুনে এত বিষপান বিষটান!


সিলিংফ্যানের হাওয়ায় আগুন নিভে যাচ্ছে। তুই বরং হাতটা আড়াল করে বিড়ি ধরা। আর শেষ সুতােটা পর্যন্ত টেনে যা। বিড়ির ভেষজগন্ধ যতই মৌতাতীয় হােক না টানলে নিভে যাবে।


মৎস্যদপ্তর সংক্রান্ত


কথা হচ্ছিল একটা দাঁতমাজনের বহুমুখীকরণ নিয়ে। বিজ্ঞাপন বিরতিতে আপনি যখন বললেন ক্রিয়া ও কর্তব্যের যে-কোনাে মুহূর্তেই মনে রাখেন আপনি একজন কবি। তারপরই আমি মাছের বাজারে গিয়ে কাঁকড়াদের মেট্রো চ্যানেলে অনুষ্ঠিত যাবতীয়। সমুদ্রকথার আর্টফিলম দেখেছি।


এমনি করেই পমফ্লেটের প্লেট থেকে উঠে আসতে পারে রূপসি ইলিশের আটপৌরে বাঙালিয়ানা। রাঘববােয়ালদের সন্তানরা রুইকাতলার জারজদের দলে মিশে গিয়ে শঙ্খের পুজোঘরে ধূপধুনাের গন্ধে মশগুল হওয়া শেখে। আবার সেখানেই দেখা যায় কচ্ছপের পেচ্ছাপ।


মৎস্যদপ্তরে যদি বায়ােডিগ্রেডেবল ফর্মুলায় তৈরি একটা হাত ধােয়ার তরল ব্যবহৃত হয়, যা দিয়ে আপনি মৎস্যগন্ধদের সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে পারেন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কেননা আপনার হাতও তখন নরম তুলতুলে জেলিফিশ। জেলিফিশরা আর যাই হােক সেলফিস নয়।


##

আমার কাছে এই সমস্ত কবিতা অপরিচিত ছিলো, আমার তখনো জানা ছিলো না জলের তলের রহস্য । উপর উপর সাঁতার কেটে গেছি । সাঁতার ও ভালো কাটতে পারি নাই । আর জল যে কত গভীর, আজ টের পাই । বরং বলা যায়, জলের তল পাওয়া বড়ই কঠিন, আর তাতে মাছ শিকার করা ? আমার এতজাবত জাল ফেলাই সার হলো । জাল টেনে পরিশ্রান্ত হয়ে ঘরে ফেরা । পমফ্লেট, ইলিশ সামুদ্রিক। আমাকে দীপঙ্কর গাং অব্দি নিয়ে আসতে পেরেছিলো । সমুদ্র তখন অনেকদূর । কবি জপমালার কবিতায় সেই মতসগন্ধ পাওয়া যায় । ফর্মুলায় ও ফিল্টারে জেলিফিস বা সেলফিস এখন বাজারে অনেক । কারো গুড় ফেলনা নয়, কিন্তু বড্ড চিনি মারা । সেই মৌলিকতা কোথায় পাই ? সেই অরিজিনাল নলেন খেজুরের গুড় ?   


ঝুমরা ও ম্যাটারনিটি song


ঝুমরা


ঢােলকাটা লেংটি ইদুরের চেয়েও লেপিসমা পােকারা ভয়ংকরভাবে অক্ষর কাটে। হলে সাক্ষ্য প্রমাণহীন গােলগাপ্পার দমদার মশালা হয়ে যায় যাবতীয় ঝুমুরগানের রিমিক্স।।


কোমল ঋষভের বিষন্নতা কিছুতেই খেয়ে ফেলতে পারছে না কড়ি মধ্যমের কড়ক। ফলে ঝুমরার গায়কি বিলাবল ঠাটেই ফিক্সড মােড। আনন্দভরা এই ভুবনের গানে পণ্ডিতজির চিরহরিৎ মেলােডি উথলে উথলে উঠছে পুঞ্জীভূত ব্যথা সঞ্চিত সুখ কথা ভুলচুক নিঠুর কালের অতিরিক্ত ক্ষরণ। মধুরতম দুখগান। নাম কাম গ্যাসে গিয়া ঝুমরার। গাঁজাইয়া ঝিমঝিমাইছে।


‘ও ঝুমুর গায়েন তােমার দিন কাটে না তােমার রাত কাটে না... শুধু ঢােল কাটে লেংটি ইঁদুরে... বাম বাবাম... ও বাবাম... বাম বাবাম...'


বড় বিকারহীন বিকৃতির আগ্রাসন ঝুমরা হে! স্প্যাজম হচ্ছে নার্ভাসসিস্টেমে, গ্রে ম্যাটার ক্ষয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্কের। আমাকে এবার কানে হেডফোন গুঁজে রাস্তা পার হতে হবে!



আনলিমিটেড টকটাইম


তােমার বালিশের পাশে চশমা আর বাঁধানাে দাঁত দুটোই থাক। আর এই মােট ফোন, এতে আনলিমিটেড টকটাইম।


মায়ের চশমাটা এখন সময়ের চেয়েও, এমনকি তাঁর দৃষ্টির চেয়েও ঝাপসা। যদি বাঁ-চোখের মণি। এই যাপন একপ্রকার পশ্চিমি ভাল। স্বেচ্ছায় লক করা ; খােলা মেরুদণ্ড দাবনা আর হাঁটু আর হাতের খিলান। যেন কাঠপায়ে চলন, জলপিজি কাঠের ঘােড়া। দেখাে মা, যেমন টিভিতে দেখাচ্ছেন জাভেদ জাফরি।


আজ খেতে বসার আগে মা ফোঁকলা হেসে বললেন এসব খাওয়ার আর বয়েস ইে দাঁতও নেই। কামড়ের আগেই বাঁধানাে দাঁতের মতাে জরুরি হয়ে পড়েছে সময় ও মাড়ির সংবেদনা। চোখের কোণে যে ভিজে সময় জমে আছে তাকে আঁচলের খুট দিয়ে মােছা। সময় কি তােমার দিকে এগিয়ে আসছে? সময় কি তােমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে? চলন না কি গমন কোনটা চাই? যদি চলেই যাচ্ছে তাহলে সময়কে এত ভয় পাচ্ছ কেন মা?


##

এই সমস্ত পাঠ , একদম আমার , এবং নিজস্ববোধে লেখা । এর ভিতর কোথাও পাঠক, রিভিউ নাই । কবি, জপমালাকে ভাঙ্গা আমার অভিপ্রায় নয়, আমি বরং মিলিয়ে নিই এই শব্দকল্পদ্রুম, বাক্য বিন্যাসে স্বাধীনতার মেজাজ, একটা আত্মবিশ্বাসের ধ্বনি এবং তাঁর সাহসী প্রকাশ । এর ভিতর সত্যি পথচলতি কাব্য-প্যারামিটার নিয়ে আমি তত চিন্তিত নই ।  কি আধুনিক, কি গদ্য, কি পদ্য, আমি এই কবিতায় দেখেছি জপমালার যৌবন, আর নেভার এন্ডিং আগুন । তার 'শিশিরের নেটওয়ার্ক', 'স্ক্যানার রাজীবলোচন দীপ্তির কৌটা' আগে আমি পড়েছি । সমস্তই বোল্ড এন্ড বিউটি । দিল্লির বাইরে যদি কেউ পাওয়ার পোয়েট্রি লিখে থাকে, সেই লিস্টে অগ্রে থাকবেন কাটোয়ার কবি জপমালা ঘোষ রায় ।



সাধারণ মেয়ে ‘লি’


কার নাম তাে এখনও মালতী। তবে আমি বিধাতার শক্তির অপব্যয় নই। কোনাে সটারনাল ক্রাইসিস নেই। ইন্টারনাল হ্যামারেজ নেই। ফরাসি জার্মান চিৎকার শীৎকার বের শেখা হয়ে গেছে। হীরে বসানাে সােনার ফুল কি সত্য? তবুও কি সত্য নয়?' এই ধারণ মেয়ের কিছু রিমিক্স কবিতা না হয় কাঁঠালের আমসত্ত্বই হল, আসলে পুরুষের কলমে লেখা হয়েছে মালতী থেকে মালতীবালার কামিনীদের ক্যাশমেমােহীন কাঞ্চনমূল্য।


লিজির সঙ্গে কি এখনও সমুদ্রে নাইছ নরেশ সেন? ‘ঝিনুকের দুটি খােলা মাঝখানটুকু। ভরা থাক..' এইসব ভণ্ডামি সাধছ? দুপুরের যােনিসাগর থেকে রতি ও আরতির মােমবিবর্তন প্রযুক্তি ও ইতিহাস পেরিয়ে অনায়াসেই চলে গেছে সিলিকন লিঙ্গের। বিজ্ঞাপনের দিকে। এখনও বােঝােনি মােমের গলন ভৌত না কি রাসায়নিক পরিবর্তন।


কবিবন্ধুনী বললেন ‘অর্গাজম আমার অধিকার। নিদেনপক্ষে স্ফীত জাঙিয়ার দৃশ্য অদৃশ্য যাবতীয় পিটুইটারির খেলা রপ্ত করতে পেরেছে আমার মেধা ও মধু। এত ফ্রাস্ট্র হওয়ার তাে কিছু নেই!


প্রতিবাদ তাে হবেই। তবে ওভাবে নয়।।


, না, অমন করে নয়, অলি, অমন করে নয়...


এসাে, তােমার ওপরে উঠি। ওপরে উঠে যাই।




নবারুণের পর তাঁর উপত্যকা


কর্কট রাশিচক্রে কোন প্রেত ডেকেছিল ভুশুণ্ডির ডাক, কোউন শালা কার বাচ্চা এক পাতে খেয়েছিল মায়ে আর ছায়ে ? মহাযান আয়না জুড়ে বমি আর বমনের দাগ! আগুনের মুখে ছাই দিয়ে কদলীবালারা কদলীকাণ্ডের মতাে সকলেই বেঁকে বেঁকে নুয়ে গেলেন নমনীয় সংবিধান পলিমাটি প্রতিষ্ঠান ছুঁয়ে। শাক দিয়ে বড়াে বেশি মাছ ঢাকা হল। লেপা হল দাদ হাজা চুলকানির ব্যর্থ মলম।


অতিবাম প্রান্ত থেকে সংক্রামক ফ্যাতাড়ুর ফ্যাৎফ্যাৎসাঁইসাঁই... গর্জনের কোরিয়ােগ্রাফি গর্জনের চেয়েও ভীমনাদ। আপনি উড়মান। লেজুড়ে বাঁধলেন মহান শ্বেতকপােত অথচ গলিঘুজি কোণ কোণ ভরে গেল চূড়ান্ত পেট্রোলে... আগুন নেভাতে চেয়ে আগুনের সমিধ সজ্জায়।।


প্রহরীর কফিনের পাশে জেগে আছে প্রত্যয়... একাকী অতন্দ্র ভােররা... রক্তাক্ত সূর্যের জন্য... আটপেয়ে বন্ধন উপেক্ষা করে মৃতদেহগুলাে থেকে উড়ে গেল বিনুদের অবাধ্য চাদর... চিহ্নেরা চিহ্নের জন্য আউলে বাউলে কাঁদল কিছুক্ষণ। তারপর করণীয়ের পশ্চাৎদেশে গুঁতিয়ে গুতিয়ে ঢুকে গেল।


শুধু হারবার্ট একাই ফেটে গেল...



জানান দিয়ে ফেটে গেল চুল্লির ভিতর...



ক্রাইসিস


কবি বললেন একটু পা চালিয়ে ভাই! আর ওরা ঝেড়ে লাথি মেরে দিল। একা বিপন্ন সিরি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ভেঙে যাচ্ছে। ইনজেক্ট করব বললেই কত যায় না।


স্বস্তিকাদি, তুমি যতবার গাইই ঝরাপাতা গাে আমি তােমারি দলে...'ওরা ভাবছেন গণতন্ত্রের ক্যাচাল। তুমি যতবার আলাে জ্বালাতে চাও নিভে যায় বারে বারে।কে গেলি বামী হারিয়ে গেছি আমি...'এইসব প্রদীপের আলাে...


নিপ্রদীপের অন্ধকার হারানাে প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ এরা কিছুই বুকছে না। বুকছে না মেঘেদের কান্নাহীন বা আর রক্তপাতহীন হেমাটোমার নীচে কতটা ক্রাইসিস ছিল। মুহুর্মুহু মহাপ্রাণধ্বনিতে কত মহাওষ্কার ধ্বনিত হল...কত মােহ... কত মহীয়ান মহাসিন্ধ পার হল... একটু পা চালালে কত কিছু হতে পারে! আসলে ক্রাইসিসটা কোথায় জানাে? কত মােহভাক মােহনবাঁশি থেকে মােহনায় পৌছােল... কিন্তু... জাস্ট একটা উদাহরণ, ছেলে বিক্রম সিং খাজুরা মারা যাওয়ার পর শুরু মােহন সিংজি আর রবি ঠাকুরের নির্মোহ ভাৰসংগীত গাইতে পারলেন না।


##

আমি বিশেষণ বেশী পছন্দ করি না । ইনফ্যাক্ট, আমি কোন সাহিত্য সমাজ, সোসাইটি, বা এসোসিয়েশনের মালিক ও নই । বরং দেখে নিই, একজন কবি, তার গৃহ, তার বধু হইয়ে ওঠা, স্বামী সন্তানের জন্য শেষ করে দেওয়া শিক্ষতার বাসনা । যেখানে , কবি শুধু শিখতে চেয়েছে । আর শেখার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে জীবন সঞ্জীবন । এতটা খোঁজ, এতটা গভীর প্যাশন নিয়ে কবিতাকে ভালোবাসা, কবিতার কোষে কোষে যাত্রা করে বুঝে নেওয়া মাইক্রোজম, সমাজতত্ব, বিজ্ঞান চেতনা, সাহিত্য পরিবার, সঙ্গীত জীবন, পাখিরালয়  । এর ভিতর কোথাও যেন বিড়ালটা তার চুপ হয়ে আছে । সমুদ্রগর্জন করে ওঠে, সেই আওয়াজে তার মিউ চুপ হয়ে যায় । মেয়েজীবন বলে যারা আপশোস করেছ, সেই দলে কবি জপমালা পড়েন না হয়তো, কিন্তু তার মধ্যেও একজন নারী রয়েছে ।  সে নারী ভুলে গেছে আয়না দেখা । তাকে হাইজ্যাক করে নিয়েছে নবারুন পাঠ, পিটুটারী গ্রন্থীর ট্রিগার পয়েন্ট, ফ্রয়েডের অবচেতন ।  পাঠক , এইহলো, জার্ক । এই হলো তাঁর ইগনিশন । আগামী দুদশকে এই ভরবেগ আর অভিকর্ষ ত্বরন মাল্টিডাইরেকশনে ছুটে যাবে । বাংলার বুকে শুরু হয়েছে, বাংলা বিস্ফরণ । বাংলা কবিতায় নতুন ডাইমেনশন আসবে অতি সত্বর , কিন্তু বাংলাভাষার হয়তো মনে থাকবে না এই স্টলোয়ার্ডদের কথা । যারা  রবি ঠাকুরের নির্মোহ ভাৰসংগীত গাইতে না পারার ক্রাইসিস নিয়ে ২০২০ তে দুকলম আগেই লিখে গেছে । 



সিরিঞ্জ


আমি তােমার প্রেমে বিপন্ন সিরিঞ্জ বারবার ভেঙেছি ডায়ারির পাতায়... গিলে খেয়ে কলঙ্কভাগ...


ব্যাং কাটার ট্রে-র পাশে আলপিনের স্বেচ্ছাচার বনাম মৃত কোশের গায়ে প্রান্তিকের মাটি। ভােট দেবেন কোন চিহ্নে? |


সম্পূরক ভাবনাদের কোনাে নিজস্ব এয়ারলাইন্স নেই তাই বলে কচি কচি কপিপাতার রোঁয়াগুলাে শিশিরের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবে না তার কোনাে মানে নেই। পালংশাক-এর ভেষজগুণ অব্যাহত থাকতে থাকতে কেউই তাে পৌঁছে দিল না প্রসূতিকক্ষে। এইতাে সেদিনও দেখলাম লাল সেলামের মতাে লাল সেরাম অধ্যুষিত সিরিঞ্জ প্রবেশ করানাে হচ্ছে তরমুজের ভিতর। তরমুজ এখন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক


বাতুল থেকেই বাউল আমি জানি। তবু বাতুলামি ছেড়ে দিয়ে বাউলায়নে ফিরে আসি সক্ষম অক্ষম। মশগুল আগুনে সেজে উঠলেন মানুষ খোঁজা বাউল ও সহজ মা। ছুড়ে মারা সালফিউরিক অ্যাসিডের পরােয়া না-করা এই রবীন্দ্র গানটা খুঁজে নিতে আমাকে যেতে হয়েছিল রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন উড়ালপুলে।।


হলুদ ধোঁয়ার নীচে কবিতা উৎসবে তখন চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে। আমরা ভেবে। করবই বা কী? উড়ালপুলের নীচের ভিখারিরা ?




রােববার


এখন ব্যাগভর্তি ভারাক্রান্ত ছুটি...


আরােপিত ও অর্জিত সম্পর্কের মাইক্রোওভেনে তৈরি হয় যেসব হটপ্যান্ট হট হটবেবি হটকাসংগীত,তার নাম রােববার। অলিতে গলিতে ললিতে কলাতে চিটিং-এ চ্যাটিং-এ চিটফান্ডে শুভতাত্ত্বিক শুভাতান্ত্রিক তােলাতন্ত্র... গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র...এইসব নিক্ষেপিত মদনবাণ আমি উপেক্ষা করি কী করে?


ঝুকি ঝুকি সি নজর...আলুথালু কাঁদনিগাওয়া রােলে অভিনয় করে আলুসেদ্ধমুখে। নায়কেরাও যখন তখন যাকে-তাকে ছেলে দিয়ে কেলে দিয়ে কায়েমিয়ানার নাকাড়া বাজাচ্ছে... পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রভুভক্ত প্রাণীদের জন্মকথা...


ধ্রুপদি নাচের সান্ধ্যক্লাসের চেয়ে এখন পার্টনারের সঙ্গে ডিস্কোথেক অনেক বেশি নিউটনধর্মী। গতিসূত্রে অফবিট মারে খুঁকো বুদ্ধিজীবী আর বন্ধ কলকারখানাগুলাে... পাকমারা রাস্তার কোনােটাই আর ঠিকঠাক ব্যাটিংপিচ নয়... ।


মেঘের পরে মেঘ জমলেই মনে হয় একটা স্যাটেলাইটের কথা,যাতে করে মহাকাশে পাঠানাে হয়েছে ইটের পরে ইট, আর চ্যালাকাঠের ব্যাটসহসম্পূর্ণ একটা গলিক্রিকেট টুর্নামেন্ট... বােধহয় আমার মা-ও এসব কথা ভুলে গেছেন...


##

যথারীতি, আমার কোন উপসংহার ও নেই । একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আর মিথ্যা বলা যায় না । বিড়ালের 'শ' আর রুমালের 'স্ব' । জপমালা প্রিয় বিড়ালকে ছেড়ে আয়নাকে কেন বেঁছে নিলো ? তাঁর কি কোন কথা বলার ছিলো ? নাকি, সে ঢুকতে চেয়েছিলো আয়নার আরো গভীরে ? সেখানে কোন কড়ে, বুড়ো, তর্জনী, কোন আঙুলই পৌঁছায় না । নাকি সে ভেবেছিলো একজন নারীর থেকে একজন মা হয়ে ওঠা কত জরুরী । একজন নারীকোষে সে পেয়েছে বিসদৃশ ক্রোমোজম । রিমিও তাই জানে ।  আর তার কেমিক্যাল লচায় ঘটে যাওয়া 'স্ব' ।  আর সবকিছু ভালো ।  ও পাড়ায় ঘটে যাওয়া, ষোড়শী রাধার গায়ে মুখ মুছে গেছে যে বিড়াল, শুধু তাহার রংটি কালো ।    

   

বইটির প্রকাশকঃ ধানসিড়ি, দাম ১০০ টাকা ।   

No comments