DEHLIJ

প্রাণজি বসাক

তারপর তাহার পর




একটু অপেক্ষা 

তারপর আকাশ - 

তারপর 

দোয়াত উল্টে পড়া নীলকালির পোঁচ


চাঁদটা কোথায় যেন আটকে আছে 

আজ

তার ধরনটা কিছুতেই একাত্মা থাকে না 

তার সাজুগুজু ঢঙ বিলকুল আলাদা 


গাছের এমাথা থেকে ওমাথা ছুটছে 

ছায়ারা

হাউসিং থেকে বেশ দূরে 

একটা মুমূর্ষু নদী 

একা

তার কখনও পাড় ভেঙেছে বলে শুনিনি 


একটু অপেক্ষা 

তারপর চাঁদ আসে বে-লাজ

অনর্গল কথা কয় খিলখিল 

তার ঢঙ 

গাছেরা জানে - নদী জানে বেশ


কারো জন্য কি অপেক্ষায় আছি 

বা আছে 

এই নবনীত পৃথিবী 

শব্দ নৈঃশব্দ্যের মাঝের 

ক্ষণটুকু কী অপেক্ষা 


জল ও বৃষ্টির সাতকাহনে 

কে কার অপেক্ষায় 

যখন ভাসায় ... পোড়ামাঠও ভাসায়


কিছুই কি বাকি থাকে জোয়ারের জলে


না-বলা কথার অপেক্ষায় 

মুখ ফিরিয়ে নেবে 

তখনও 

বিশ্বাস রয় নীরব প্রেমজ অপেক্ষায় 



যাদের সাথে কথা 

নিভৃতে 

কথারাই দূরদূরান্ত থেকে দৌড়ে আসে 


মুখে মুখে মানচিত্র 

ঠাসা আধুনিক মাস্ক 

শুদ্ধ অশুদ্ধ বিশুদ্ধ কথাগুলো 

থরে থরে 

স্তরে স্তরে 

স্তবকে স্তবকে 

ঝলমলে রোদে 

সাঁজোয়ায় কি মায়া কি মায়া খেলে আজ


নাক-মুখে চিহ্নিত সময় দূর দেশে আপনজন

গাছতলায় কেউ ফেলে গেছে শখের বিজ্ঞাপন


প্রান্তিক মরুদেশে বিস্তর কাঁটাঝোপঝাড়

প্রগাঢ় নৈঃশব্দ্যের আবহ 


কোথাও কোনো শরীর-শরীর ভাব নেই 

প্রকৃতির নিপুণ গ্রন্থণা 

যেন গ্রাস করে আড়াল 


দূর খানিক দূরে 

ইতস্তত পাথরের ঢিবি

একদল চিনকারা হরিণের 

বিচরণ চোখে পড়ে 

তাদের পায়ের শব্দে বৈষম্যের প্রশ্ন প্রখর 


আমি খুঁজি নিঃশ্বাস আমারই স্বকীয় বোধে


কোনো বন্ধুর বিস্ফারিত 

চোখ থেকে জেনে নেব অধর্ম 

যুদ্ধশেষে জয়পরাজয়ের নিতান্ত ফলাফল 

বা 

কোথায় কোনদিকে 

পিতামহের শরশয্যা অশ্রুত প্রবাহে

কে তবে হাঁটে 

নিশির আঁধারে অনন্তকাল খাণ্ডবদাহনে 


যেভাবে ডাক পাড়ো 

সন্ধ্যামালতী ঝুঁকে পড়ে 


গোধূলি নামে সমান্তরাল বলয়ে 

একটা মিহি সুর তোলে বাতাসে


প্রদীপের নাভিতে তেল সম্ভার

পুড়বে সারারাত ভেঙে ভেঙে 

আমি তুমি সবাই যেভাবে ভাঙি


নিজের কাছেই প্রতিনিয়ত ভাঙা 

নতুন পোশাকও বৈশাখী মেলায়

বিস্ময়ে স্তব্ধতায় জুড়ে রাখে ঘুম 


গৃহবন্দী অসুখ মুখ লকডাউনে

মুখোমুখি নয় আয়নায় নয়... 

তবে শুধু 

ছবিতে ভাসে সমুজ্জ্বল তোমার মন


লন্ঠন নেই মোবাইলের আলোয় দেখা 

আত্মজীবনী 

আর সংসারের সুদূর মগ্ন পথ


কতটা খেলাখেলি জানালায় 

প্রান্তিক উঠোনে 

এবার উঠে যাবো 

ছাই ভস্ম মেখে ঐ তালগাছে 


ছায়াতলে দাঁড়িয়ে বাড়িটির 

প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড 

চাদ্দিকে নিশ্চুপ সুনসান 


কোথাও কেউ নেই -

ছায়ারা ক্রমে ঘন হয়ে আসে 

তোমার শুধু তোমারই জন্য


রুমালে সঞ্চয় কিঞ্চিৎ ছায়া

এসো কাছে এসো 

দুজনেই দাঁড়াই

এমন পরবাসী ছায়ায় 


তোমার করতল ছুঁয়ে কিছুটা আলো

ঝিলিক মাত্র 

কিছুটা ঠোঁটের ফাঁকে 

পরম প্রাপ্তি আঞ্চলিক দুপুরে 


দূর বেশ দূর থেকে ভেসে আসে 

হকারের উচ্চকন্ঠ - 

বিনিময় প্রথা

একটা গল্প হাতে 

আরেকটা নিয়ে 

প্রাইভেট গার্ড দাঁড়ায় ওপাশের প্লটে


বাস্তবে সম্ভব নয় - - এমন কথা বলে

ঘুমোতে যাও - 

আমি আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখি

চোখ বুজে দেখি মনের কারবার 


আঙুলগুলো নিশপিশ করে 

নখগুলো ক্রমশ হিংস্র হয়ে ওঠে 


মধ্যরাত ছুঁয়ে যায় অশান্ত ক্রিয়াদ্বন্দ্ব 

দূর থেকে -- 

আজীবন দূর থেকে দেখে যাবো

সম্ভাবনা কতকাল আর কতকাল দূরে রাখো


কতটা কাছে এসে আছো - হে ছায়া


মধ্যরাতে উল্লাস চিৎকারে খানখান 

ভাঙতে হবে আন্ধার

বলে গেছে দীপংকর দত্ত

এমন চিৎকারে যেন  খসে পড়ে কনটপ্লেসের পলেস্তারা 

বেঁকে বেঁকে পড়ুক পার্লামেন্টের বুড়ো বুড়ো থামগুলো 

আর তফাত যাক অদ্ভুত কিম্ভুত প্রমুখ সাংসদ ছায়াগুলো 

 

ঠান্ডা ঘরগুলোর কয়েদ বাতাসকুন্ডল 

আর ভারতবর্ষের স্বপ্নগুলো যেন 

ছুটে বেড়িয়ে আসতে পারে মুক্ত স্বাধীন 

চিৎকারে চিৎকারে খানখান হবে হনুমান মন্দির 

অথচ ঘুম ভাঙবে না 

সাবওয়ের ঘুমন্ত ক্লান্ত বেহুঁশ মেয়েশরীরগুলোর   

কফি হোমের পেছনে পাতলা অন্ধকারে 

বিশ্বজনীন দুঃচিন্তা ঘিলুতে নিয়ে ঘোরেফেরে 

দু একটি বিষন্ন ক্লীশছায়া 

এমন উল্লাস কোনোদিন মধ্যরাতে শোনেনি 

উজ্জ্বল কান্তিময় নিয়নবাতিরা 

তারা নেমেছে উৎসুক মিছিলে 

ভাষাহীন এই মহাবিশ্বের মহান মহামিছিলে 

একেবারে সামনের দিকে 

দীপংকর দত্ত আজ নিজেই 

অথচ কবেই আধপোড়া নাভিকুন্ডল 

হিন্ডনের পঁচা জলে ভেসে গেছে

তা কি জানে তুলসীনিকেতন 

বলে গেছে ভাঙতে হবে আন্ধার 

খানখান

মধ্যরাতে উল্লাস চিৎকারে 


জাফরির প্রতিটি খোপ আলোমাখা 

মেঝেতে ছড়ানো সাপলুডু চালচিত্র 

সিঁড়ি পেয়ে তুমি যে শূন্যে উঠে যাও


আমার নিজস্ব চালে আমাকে 

গিলে খায় লুডোর মায়াবী সাপ 

কোথায় তুমি .... কোথায় আমি




মধ্যাহ্ন-রূপে এতটা নিকটে তুমি হে ছায়া 


লালনপালন পরিচর্যায় ওড়ে রাতমেঘ

রোদআলো হাওয়াবাতাস ওড়ায় স্বপ্ন 


হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে নিবিড় নীলিমা 

এভাবেই বাঁচে বীজ - 

নেশা নেশাময় রাতে 


শুকনো হাতদুটোর কনুই পর্যন্ত প্রসারিত 

ফর্সা-আলোর জানালা

কখনও জমায়েতে শামিল হওয়ার সুবাদে 

হাতদুটোর অহংকার 

এখনও অস্থির 


কোনো পছন্দের রঙ লেগে আছে কিনা

আজ বোঝা মুশকিল 

তবে একটা তীব্র গন্ধ ছুটে আসছে বুঝি 

হাতের জানালা ছুঁয়ে থাকা 

বৃদ্ধ-জীবন অচেনা ভাষায় গল্প সাজায়


এভাবেই দেশ চলছে 

এভাবেই দেশ চলবে

এভাবেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে ভাইসাব

এভাবেই হাতের ইশারায় রঙ বদলে যাবে 


জানালা খুলে হাত বাড়ালেই ব্যর্থ ছোঁয়া 

অচিন পাখির চঞ্চলতা 

ভীষণ একটা অসুখের খবর রেখে যায় 


অদ্ভুত একথান শিহরণ 

চারদেয়াল ছুঁয়ে 

শরীরের আড়মোড়া ভেঙে নয়

নিঃশব্দে ঘরময় 

বিধর্ম অধর্ম নয়

কেবল সময়ের ব্যবধানে পঁচে যাওয়া শিক্ষা 

তবুও বেড়াজালে আটকে পড়ে আপ্লুত চোখ 


কতটা নেব ... কতটা নেবে 

এসব ভাবার কোনো অর্থ নেই 

নিরন্তর খোঁজে অক্লান্ত প্রয়াস 

তাহলে জীবনের অর্থ কী... 


এইটুকু জিজ্ঞাসা রেখে পা রাখলে 

এ দরজা থেকে ও দরজায় 

আমার করতলগত আঁধার পোড়ে সর্বাগ্রে 

অহেতুক দ্বন্দ্ব বিড়ম্বনা 

সেই থেকে ঠিকানাহীন


থান থান বিস্ময় পেড়িয়ে সোজা গিয়ে বসি

বিষয়হীন কর্তব্যহীন এক জরুরী মিটিংয়ে... 


তোমার দিকে তাকালেই 

সমগ্র পৃথিবী কেঁপে ওঠে 


তোমার দিকে তাকালেই 

ক্রমশ চোখ বুজে আসে


তোমার দিকে তাকালেই 

শরীর অবশ হয়ে পড়ে 


তোমার দিকে তাকালেই 

আমি শিশু আর তুমি মা 




কত কত পাথর ক্যাম্পাস এলাকায় 

থরে থরে গাঁথা যেন পাথুরে পাহাড় 


মাটি চেয়ে চেয়ে দেখে - তার উপর 

ভর করে দাঁড়ানো নব্য গম্বুজবিহার 


তুমিও চেয়ে চেয়ে দেখো হাড়পাঁজর


তার মাঝে ছোট্ট একটি লালগোলাপ

ভালোবাসা ভালোবাসার নাম বুঝি তার



রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে নিঃশব্দে নেমেছিল বৃষ্টি 

ভোরের উঠোনে দেখি 

ভেজা ভেজা জল জল


যারপরনাই গোপন রেখেছ আত্মহত্যা সূত্র 

বেপড়তা সমঝোতা 

কতটা সঙ্গিন ছিল জীবন


জলের প্রতি এতটা অস্থির ছিলে বুঝিনি বৃষ্টি 


প্রতিটি ক্ষণ পাশে পাশে থাকি এখন

অক্ষর যেমন থাকে 

শব্দে ব্যাকরণে

শরীর এলিয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ বেলায়

শরতে মেঘ ভাসে একা একা যেমন


ছায়ারাও বেশ চেনে জানে বিশ্রাম গৃহ 

সবুজ ছায়াপথ নদীনালা অরণ্যসমূহ 


কে কার জন্যে দাঁড়ায় খন্ড বাসস্টপে

হাওয়াও কামড়ে দেয় প্রতীক্ষার গতরে 


কাদামাটি ছেনে ছেনে তুমি গড়ালে জীবন 

আমি ডুব মেরে তুলে আনি অমূল্য রতন 



কথার পর কথা অনেক কথা 

বলা হল সখা

মুখে মুখে মাস্ক - 

কতদিন হাতে হাত রাখিনি 

কলকলে কথারা তবুও 

অখণ্ড সময়ের কথা পাড়ে 

আর শোনায় সেসব গাঁথা পংক্তিমালা


নিত্যদিনের অভ্যাস 

খুলে রাখ পুবের জানালা

হাওয়াবাতাস আসে যায় 

দৃষ্টি রাখ দূরের ছবি

চোখে পড়ে সবুজগাছপালা 

আর পাখপাখালি 

গাছেরাও চোখ রাখে অন্তরালের আনাগোনা 


এই পৃথিবী একদিন শব্দহীন হবে - 

আর্কাইভ থেকে তুলে আনবে 

শব্দের ফসিল 

জানালার ওপাশে শব্দ খিলখিল ভেসে উঠবে 

হাজার বছর পরে শব্দহীন পৃথিবীতে 


মেঘের আবার দেশ বিদেশ কি 

ভাসলেই হলো

এপার নেই ওপার নেই 

চিহ্নিত কাঁটাতার নেই 


ভাসতে ভাসতে গাভিন হয় 

বৃষ্টি হয়ে নামে 

গাঁও গঞ্জ মাঠে

একদিকে কয় জল অন্যদিকে পানি 


ইঞ্চি কয়েক দূরে যে আধার

সে কি আর বাঁধা ফ্রেমে আটকে থাকে 


অনেক তোয়াজতামাশার পর সে

শিল্প হয়ে ওঠে - 

সম্পর্ক তাই তো বিষয় 


আমাদের ভাবে ভাব 

দূরত্ববোধ উধাও 

অভিভূত বিস্ময়ে আমরা কুশল শিল্পী 

চোখে চোখে আর কোনো ইশারা নয়


সবই বুঝি প্রকৃত প্রকৃতির খেলায় খেলা 

বন্ধনহীন যুক্তিহীন জলবায়ু 


নতুন রূপে এ মৌসুমে 

আমি-আমি তুমি-তুমি

আমি-তুমি তুমি-আমি

খুলে যায় পথ একের পর এক 


ভূমিকাহীন ভ্রমণ থেকে তীর্থ ভ্রমণে 

দেখার চোখে অন্য চশমা ওঠে এবার


আড়মোড়া ভেঙে ভেঙে চলে আসে 

নভেম্বর ডিসেম্বর 


ভাদরের এক বিকেলে ভেঙেছে

মায়ের তরঙ্গ বিদীর্ণ হাহাকার 


দ্রুত বেগে বদলে গেছে ফ্রেম 

হেমন্তের মাঠে বসন্তের গানে


প্রশ্নপর্ব তুলে গড়িয়ে পড়ে বিস্তর জল

ভোরের ভাস্কর্য অচেনা জীবন ইতিহাস



যা ভাসাবার তা ভাসাও 

কোলাজ নদীতে 

দরদাম দর কষাকষি ঘাট পারাবার 


বিশ্বব্রহ্মাণ্ডজোড়া নানাবিধ অনুষঙ্গ 

অস্তিত্ববোধ খুঁজে খুঁজে 

এই নদীঘাট


যা ভাসাবার ভাসাও আজ ত্রিস্রোতা নদীতে 


মিলিত কারবার বেশিদিন টেকে না

এমন কথা বলেছিলে 

প্রথম দিন 

ভয় আশংকায় আমাদের যৌথ স্বরলিপি 

প্রথিত অক্ষরে কে কাকে খুঁজি প্রতিদিন 


সকালের আলো চিরে চিরে 

কখনো পৃথিবী গান ধরে 

লেবু ফুলের গন্ধে ম-ম করে 

তুমিও বাড়াও ঋণ একান্ত কারবারে


সবুজ রঙ বড়বেশি প্রিয়

এ কথাও বলেছিলে প্রথম দিন 

দূর থেকে দেখলে দেখি নীল আভা

রঙ মহিমা অকেজো লাগে

যখন খেলে যায় ক্ষণজন্মা বিদ্যুৎ-রেখা


রাতের মেসেজগুলো ডিলিট 

হয়েও হয়নি


ভোরের আলোয় জ্বলজ্বল করে 

যেন ফুলের সাঁজিতে সাদা টগর 


মেঘহীন উঁচু আকাশ 

তবুও মেঘের গুড়গুড় ডাক 

বুকের ভেতরে ডর

ঘরের ভেতরে ঘর

তারও গহনে অন্দরমহল


আর এক-পা এগুলে খাদ

রূপহীন অতল গহ্বর 

আতঙ্কে গলা শুকিয়ে কাঠ 

এইসব স্বপ্নে আসে আজ


ঘরে দাঁড়িয়ে দেখি জানালা 

জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি ঘর


ও ঘরে কেমন প্রতিবেশী 

শিস দেয় বড্ড বেশি বেশি 


ও ঘরে জানালা কোথায় 

এ জানালায় ঘর কোথায় 


কেউই কখনও আসে না

এ ঘরে অথবা জানালায় 


আমাকে দোষ দিও না

এদিক ওদিক তাকালাম 


রোদ গিলে খাচ্ছে সময়

আমাকে গিলছে অপেক্ষা 


জানলার পর্দা নড়ে উঠল

পাশের ছায়া কোথায় গেল


আমাকে প্লিজ দোষ দিও না 

সময় যে থমকে দাঁড়ায় না


তুমি ... তুমিই 


আমার যাপনের প্রত্যয়ে

এক বিশ্বস্ত বন্ধু 


আর

এক শুদ্ধ আরাধনা 


তুমিই ... তুমি 


দিনান্তের পার্বণ পালা


কিছু কিছু শব্দের আঁধার তুলে রাখা 

সংগোপনে আজীবন 


সময়ও জানে 

তুমিও তুলে রেখেছ

স্বরলিপি রাত্রির ভূগোল


অগোছালো দুপুরের কিছু শব্দ রয়ে গেল

তোমার-আমার দ্বন্দ্বে 


রাত্রির গভীরে এঁকে যাওয়া ক্যানভাসে


তীব্র কঠিন রোদের অন্তরালে কথা হল

চলাচল হল 

অনেকদিন অনেককাল

তারপর প্রথাগত আদান-প্রদান ছিল 

তুমিই উপলক্ষ - 

তোমারই হেতু সময়কাল 


আজ বুঝি সাদা কাগজের মত 

সকাল হল

গত রাত ছিল চিরন্তন সত্য 

চারদিক থেকে 

ঘিরে থাকা ঘন অন্ধকারে 

পোড়া এক জীবন 

মধ্যবর্তী সংলাপ কারোরই মনে নেই এখন 


রাতআকাশে তুবড়ির দ্যুতি 

যেমন ক্ষণিকমাত্র

গত রাত ছিল চিরন্তন সত্য .... 

ঘন অন্ধকারে পোড়া এক দ্যুতিময় জীবন 


আগে আগে মায়া-হরিণ 

পেছন পেছন যাপন

খুব সন্তর্পণে 

তীক্ষ্ণ নজরে 

তাদের পিছু পিছু মরণ


সবাই একই পথে হাঁটছে...


কোনো একসময় বন্ধ পথে 

মুখ থুবড়ে পড়ে 

মায়াবী মায়া

তার উপর আছড়ে পড়ে যাপন

এমন সুযোগে ঘাপটি মেরে 

ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণ


আর পথ -

থমকে দাঁড়িয়ে দেখে অনিবার্য জীবন 


ঘুম ভাঙার পরেও ঘুম ঘুম ভাব

কোথাও সাতটা বেজে ওঠে 

সংসারে বাজে নিয়মিত ঘন্টা 

কিছু মানুষ গাছতলায় দাঁড়ায় 

বোঝে রাত্রি জাগরণের তন্দ্রাবোধ


দুজনের দৃষ্টিতে অপার আকাশ 

পাখিদের খসাপালক ভেসে ওড়ে

বাতাসের গান ব্যালকনি আসরে 


আমরা কেউ জানিনা পালাক্রম

আমাদের যাত্রাপথ সঠিক কিনা

জানিনা - 

একজোড়া চড়ুই খুঁটছে 

খুদ কণা - 

তাদের চোখে ঘুম ঘুম ভাব 

কোথাও সাত সকালের সাতটা বাজে 


তারপর তাহার পরে আর রক্ত ঝরল না

রক্তকরবীর গর্ভে জমে 

বিন্দু বিন্দু ঘাম

ভোরে অস্থির সময়কাল জুড়ে স্থবিরতা 

নেমে আসে - 

তারপর তুমি ওড়াও ধ্বজা 

তাহার পরে

জমিনে ফলিত চাষ 

ফসলের আকাঙ্ক্ষা 

কোথাও কিশলয় ভূমিকা 

কোথাও আগুন 

মুক্ত নয় বাংলা কবিতার ছন্দ কাব্যবসতে

লহু স্রোত বহতা নদীর দুঃস্বপ্ন অনন্ত খোঁজে 


অবাধ শস্য আবাদে 

মাটির গর্ভে অভিসন্ধি 

তোমার গোপন আঁধারটুকু আলো হাসি


একটা লোক জানান দিয়ে বলে গেল 

আগামীকাল চর্চা হবে - -

কার শিকড় কোথায় 

আর কতটা তলায় 


লোকটাকে বন্ধু ভেবে ডেকে আনি কাছে 

বলি - শিকড় মানে কি বন্ধু 

সে মাথা ঝাঁকিয়ে টেনে টেনে বলে 

শি... ক.... ড়

শি... ক.... ড়

ড়- টাকে বাদ দিলে ভাই থাকে শিক


অনেকক্ষণ চুপ থেকে 

আগুনে পোড়া

শলাকার মতন লাল হয়ে ওঠে লোকটা 

বিড়বিড় করতে করতে মাথা চুলকায় মানুষটা 


মূহুর্তে দেয় ছুট 

আর পাগলের মতো বলতে থাকে - শি... ক.... ড়


বহুস্তর পেরিয়ে গোপন সংলাপ ছুঁয়ে থাকে 

ধ্রুবতারা বহুকাল বহু আলোকবর্ষ ধরে

তোমারই অপেক্ষায়


নক্ষত্রমালায় লিখে রাখা বহু সংলাপআলোক

শুধুই তোমারই মায়ায় 

রাতের আকাশে ঝলমলে চিরন্তন 


আজ রাত নেমে আসুক চাই না আসুক

এখন দেখি শুধু 

ঘনিয়ে আসা আঁধার আমার 


কোনো কথা নেই ভাষাহীন কাল সামনে বসে 


আজ মুখোমুখি নির্বাক সংবাদ সংলাপ বিহীন


অদৃশ্য এক মোহন গন্ডি ছুঁয়ে থমকে দাঁড়াই 

দূরত্ব ছিল 

এবং আছে 

এবং থাকছেই


প্রতিদিন বাড়ছে না কমছে দূরত্ববোধ বুঝি না 

প্রতিদিন কথা ওঠে ধর্মবোধ 

সমাজবিজ্ঞান 

ভূগোল অথবা ধ্রুবতারা উত্তর দিশারী ইশারা


আকাশ কি প্রতিমুহূর্তে কাছে ডাকে পৃথিবীকে

নীল নীলিমা কার - 

এমন কাজিয়ার একশেষ 

কে তবে ছুঁয়ে থাকে 

মোহন গন্ডি বিষন্নবেলায়


এই তো নাগালেই ... তবুও বুঝি দূর-দূর ভাব


অবাধ্য ছেলেমেয়েরা আলোর সাথে 

খেলছে তো খেলছে রাতের প্রচ্ছদে 


কখনও রাস্তায় 

কখনও ঘাটে 

কখনও লাইটপোস্টের মাথায় 

কখনও গেটে তালার ছিদ্রমুখে 


রাতে চোখে আলোই আলো রানি

সাম্রাজ্য জুড়ে অঢেল রোশনাই 

তরতর করে বেড়ে যায় আলোর 

খেলা মায়াময় রাতের ক্যানভাসে 


ভোর ফুটতেই কোথায় যে লুকোয়

খুঁজে পাওয়া ভার - 

কে তবে খুঁজে 

বেড়াবে বেড়ে ওঠা বেলার ঠিকানায় 


অক্ষরের তন্দ্রাঘোরে 

শুনি গোপন শব্দের 

গর্জন 

বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঝড়-ঝাপটা 

ধেয়ে নেমে আসে চরাচরের বুকে

 

ততক্ষণে বুঝি বাক্যবন্ধরা বিন্যাস ছেড়ে 

আলপথে হাঁটে শব্দের চারুময় বোধে


স্বপ্নে দেখি আত্মমগ্ন শ্লোক ছটা 

শুনি অজানা এক ভাষায় প্রেমালাপ 


আমার-তোমার 

তুই-আমি 

একই জলে ভিজে 

ভাসতে থাকি 

তুমুল সন্ধ্যায় নিরালার মোড়ে 


অন্তরীক্ষে ঝুলিয়ে রাখা অসহজ প্রশ্নমালার

উত্তর করতে যেওনা - 

যে বিষয় তোমার রপ্ত 

তুমি সহজ তুমি গরগর তোমার আয়ত্ত্বাধীন

সেসব প্রশ্নের 

সূত্র সমাধানের নজর রাখো


ধৈর্য ধরে সহজ কথাবার্তা সরল ভাষায়

উত্তর করো 

দেখবে দুর্গম পাহাড় সরে গেছে 

কঠিন বরফ গলে গলে নেমেছে - 

আকাশ ভরা সৌরভ আর 

তুমি পেয়ে গেছ স্টারমার্কস


তোমার শরীরে মাটি উঠেছে জল উঠেছে 

সার পড়েছে 

অন্তরীক্ষের প্রশ্নমালা 

আর কাছেপিঠে নেই - 

তোমার জ্যামিতি ঘিরে 

অসংখ্য আগুন আগুন চোখ ... তুমি পুড়ছ


জনারণ্যে - পরিযায়ী গাছেরাও এখন হাঁটছে 

নিয়ত নিয়তির যুদ্ধহীন যুদ্ধে 

মুখোমুখি কোন দিকে 

পবিত্র পরিশুদ্ধ শ্বাস 

তোমাদের আমাদের জনারণ্যে - 

পরিযায়ী শ্রান্ত ক্লান্ত পাখিরা

উড়ে এসে বসে 

উদ্ভ্রান্ত শাখায় 

খড়কুটোর বাসায় 

তবু ডিম পাড়ে মা-পাখি


কাল কালান্তরে ওড়াউড়ি বসবাস 

বুঝি গড়মিল ছিল 

তোমাদের আমাদের  বন্য জনারণ্যে 



তার আর এক নাম সূর্য নগরী

ঝাঁ ঝাঁ রোদে উপন্যাস হবে 

হরিণেরা কাঁটাঝোপঝাড়ের ছায়ায় 

নিজস্ব ছন্দে খোঁজে শকুন্তলার প্রশ্রয় 


বালি উড়ছে ছবি উড়ছে 

ছায়া অস্থির 

কিছুতেই আঁকা যাচ্ছে না 

শুখা মরুপ্রান্তর

এক অবোধ্য ভাষায় কথা বলছে চরাচর

মনে হয় না নিমছায়ায় 

এবার জলছবি হবে 


ছুটে আসছে শহর সভ্যতা বাইকের হর্ণ 

দূরে সরে যায় 

লোকায়ত বিশ্বাসের গান

বৃষ্টির অমোঘ দাগ মুছে গেছে বহুকাল 

সূর্য নগরী মনে রাখে তোমার স্বপ্নগুলো


একদিন - পথশ্রান্ত ক্ষুধার্ত ক্লান্ত পরিযায়ী 

শ্রমিক দল রেল লাইনে মাথা রেখে 

নিশ্চিন্তমনে ঘুমোয় ঔরাঙ্গবাদে

অতঃপর দুরন্ত বেগে ধেয়ে আসে 

একটি মোক্ষম ট্রেন

 নিমিষে কাটা পড়ে 

ঘুমন্ত অবস্থায় পনের জন

মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে রুটির থলে

মানুষের রক্তে মাংসে মাখামাখি 


এসব খবরে আজকাল 

আর চমকে ওঠো না তুমি... 

শুধু তোমার চোখে 

চিকচিক করে একটাই প্রশ্ন - - দায়ী কে! 

- পরিযায়ী শ্রমিকেরা 

- স্টেশন মাস্টার 

- ট্রেনের চালক

- সিগনাল সিস্টেম 

- রেলপুলিশ 

- গার্ড 

- রেলমন্ত্রী 

- শ্রমিকদের মালিক 

- শ্রমিকদের দালাল 

- শ্রমিকদের বউরা

- শ্রমমন্ত্রী 

- লোকাল লিডার 

- এমপি এমএলএ

- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী 

- গুপ্তচর বিভাগ 

- সংবিধান 

- রাজনৈতিক দল

- অথবা মনকিবাত কওয়া প্রধান সেবক

কে দায়ী! 

তুমি বিড়বিড় করে বললে ঃ

দায়ী কেউ নয়... এটা দুর্ঘটনা মাত্র 

তবুও দায়ী যদি করতেই হয় তো দায়ী 

ঐ শুয়ে থাকা বেহায়া রক্তখেকো রেললাইন 


তার ফাঁসি হোক




মুখের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বেলুনের নির্যাস

একপিঠে হাওয়া 

অন্য পিঠে জল

বেসুরো সানাই হরণ করেছে সময় 

নর্দমায় ভেসে ভেসে পার হয়

মহানগরীর বেড়াজাল 


মুখের মধ্যে মুখ খুলে আহ্লাদ 

যমুনার আবর্তে আবহ সঙ্গীত 

অনেক তো হল বৃন্দগান 


আধ খাওয়া আপেল

পঁচে গলে গন্ধ ছড়ায় 

যাপনের যাপন গল্প 


সিঁড়ি ভাঙছি - এইতো 

গেটের ওপারে আমন্ত্রিত সময়


বুকের মধ্যে রঙিন বেলুন

বেলুনে রঙিলা তামাশা 

গুহাময় জলে হাহাকার 


রামধনু ইতিমধ্যে হয়েছে রঙধনু

দাদাদের দলগত উচ্চারণ 

পাঠ্যপুস্তক জুড়ে বেহদ্দ বিষ


এদিক ওদিক থেকে ডাক নাম

কে কোথায় নামতে - মনে আছে 

বাবুরহাটে মুকুন্দ 

মারুগঞ্জে কৃষ্ণ 

বলরামপুরচৌপথী পেরুতেই 

রোগা পাতলা ছেলেটার 


তৎপরতা - সে নামত


গায়ে মাখা আজব রোদ্দুর 

ঝর্ণামায়া আকুতি 

কখনও বাঘের ডাক শোনে নি 

বিড়ির ধোঁয়াকে বলে মেঘ

উড়ন্ত পাখি তার চোখে পোকা 


শূন্য পকেটে অবোধ্য 

কবিতার লাইনগুলো 

গুড়ো গুড়ো ভাঙতো 

ভাঙতে ভাঙতে নামত

নামতে নামতে ভাঙছে 

ভাঙছে সে নিজেকে 


একটু বসার জায়গা পায়নি 

বলে দাঁড়িয়ে আছে... আজও



ভাতের থালার আর কোনো ঠিকানা রইল না

ছুটখাট উৎসবে জন্মদিনে নিরামিষ আইটেম 

অতসব আমিষ মানায় না এইদিনে 

ভারতের পুরো ম্যাপটাই 

আইসিইউ কেয়ারে 

জুতো খুলে প্রবেশ ধরাধামে 

স্বল্পশ্বাসে ফুসফুস ক্রিয়াশীল 


জীবনে প্রথমবার আইসিইউ দেখি 

পশ্চিম বিহারে প্রাইভেট নার্সিংহোমে 

বাংলার প্রোফেসর মিহির রায়চৌধুরী

বাড়াবাড়ি করে তখন গোপন আস্তানায় 


আমাকে দেখেই বললেন - 


ওহে প্রাণজি দিল্লি হাটার্স হাটুরে 

কতগুলো হাট দেখা হলো

একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলেন -

প্রতিটি কবিতা একেকটা অন্বিষ্ট হাট বুঝলে 

প্রতিটি কবিতা একেকটা অন্বিষ্ট হাট


বলি - আপনি তো সভাপতি...


একটু সময় নিয়ে স্বপ্নালু মায়ায় প্রশ্ন করেন -

দিল্লিহাটের ঐ নিমগাছ দুটোর বয়স কত হল

রবীন্দ্র গুহকে একবার জিজ্ঞেস করো

উনি তো বহুবার নেহেরুকে পয়দল 

হাঁটতে দেখেছেন জোড়বাগ এলাকায় 


সেই থেকে আমি নিমগাছ দুটোর বয়স 

হিসেব করে চলেছি ভাঙা হাটে 



লেবু জলে হালকা নুন

তাতে মেটে দিঘির পিপাসা

গভীরে তার বুদ্ধ পূর্ণিমার গোটা চাঁদ ডোবে 


পাখিদের কোলাহল থেমে গেলে 

মুখ ধুয়ে নেয় সুশীল সমাজের উচ্চবর্গ

নতুন গানের আবহে হাঁটছে বৈশাখ 



পরন্তু থেকে আত্মনির্ভর

অনিশ্চয়তার মুখোমুখি ঈশ্বরের মানুষেরা


হে প্রভু কত আর গাইবে খেয়াল

লাখ লাখ কোটি কোটি শূন্য মন্তাজ 


হারানো সুরের এক কণা দাও

একটু ছায়ায় গিয়ে বসি.... 


দিনদিন গাছের কোমর বাড়ছে 

ঝাঁকড়া মাথায় দেদার ছায়া


মানুষেরা এসব চোখ রাখে

চক্রবৃদ্ধির ছকে অংক কষে 


ফুল ফলন্ত সংসার ঘরদোর 

চারদিকে রঙের বাহার

পতাকা উড়ছে... 


সব রঙ ফেলে শেষে 

কমলারঙের মন বড়ই চঞ্চল 

শরীর থেকে খসে পড়ে আদল


জানলাকপাট জুড়ে সন্দেহ প্রবণতা 

পুরুষে পুরুষ সে ভিন্ন প্রমোদ বিলাস

শরীরে নুনের দাগ... এই বুঝি সন্ন্যাস


বিছানায় চাঁদের হাট 

মেঠো পথ এই দেখো

এই দেখো 

ঘুম-ঘুম নাইট ম্যাজিক শো


শরীরে শরীর ছুঁয়ে রাতভর বাগান হলো

থেকে থেকে ঝড় এলো 

ঝড়ের নাম আম্ফান


একপায়ে দাঁড়িয়ে এ কেমন বিচিত্র ঢঙে 

ভয় দেখাও - 

নদী দেখাও - 

ঘাট দেখাও


পাঁচজনে চাটবে ভোর 

পঞ্চমুখে পালা গান 

পাড়ায় পাড়ায় অযথা আঁধার পোড়ে 

কখনো কিঞ্চিৎ আলোর ঝিলিক মাত্র


এই দেখো বিছানার চাদরে 

চাঁদের হাট 

তোমারই বয়সের নিপুণ ফোঁড়ে ... 


সারারাত ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়ে আছো 


রাতের শব্দ আর আঁধার দিয়েছে সঙ্গ

চোখের পাতায় ভর করেছে বিশ্বাস 

অসংখ্য ছবি এঁকেছ মনের দেরাজে 


কার কথা মনে এলে আলো ফোটে 

ভোর আসে - তুমিও ঘুমাতে যাও ... 


ঝড়ের তান্ডবে তছনছ 

আমাদের এই বয়স

পথে নামিয়ে আনি 

এযাবৎ ভুল বোঝাবুঝির


প্রাচীন বৃক্ষ - বহুল শাখা প্রশাখা 

ভর না ভার বুঝিনি - 

উপলব্ধির আরেক নাম সত্য


পৃথিবীর শেষ শব্দটা শুনতে চাও

যা কিনা সত্য মিথ্যার মাঝামাঝি 


সুখদুখ আলো আঁধার কান্না হাসি

শব্দ নৈঃশব্দ্যের মাঝে তুমিই তুমি 


কিছুটা সময় কাটাতে কেউ আসে না 

কবর পরিসরে 

কেউ আলাপ জমাতে আসে না 

সন্ধ্যার অবসরে 


কিছুটা অহংকার মাটি চাপা পড়ে 

তৃষ্ণা পিপাসার চাহত চাপা পড়ে 


কেউ চারাগাছ রেখে যায় 

বর্ষার জলে বেড়ে ওঠে 

বেড়ে ওঠে কিছুটা ঝোঁপঝাড় 

কিছুটা ছায়া ঘন হয় আপন খেয়ালে 


গা ছমছম নির্জনতা 

ভয়ংকর নিস্তব্ধতা 


কেউ একবার ধূপকাঠি জ্বালায় 

ছড়ায় সুগন্ধি 

সরু তারের মতো সাদাধোঁয়া ভাসে 


খুব নিচু স্বরে কথা চলে 

সম্পর্কের 

জীবনের 

আর অপেক্ষার ... 



যতটুকু দরকার ততটুকু চিনি তোমাকে 

তুমি ততটুকু চেনো আমাকে 

যতটুকু দরকার 


এর বাইরে অসীম অনন্ত অন্ধকার 

কখনও সখনও নক্ষত্রপুঞ্জের

ছায়াপথ চোখে ভাসে 


শপিংমলে ট্রলির মতন 

আমাদের চাহত ভরে ওঠে 

বারকোড স্ক্যান করে করে 

হয়রান কাউন্টার গার্ল 

তার হিসেব অন্যরকম 


ঘরে ফিরে আমরা মিলিয়ে নিই 

মাসকাবারি দরকার টুকু

তোমার আমার 


মুখে মুখে মাস্ক সীমিত বার্তালাপ

এও এক নতুন মাত্রা বসবাস 

ততটুকুই চিনেছি তোমাকে যতটুকু দরকার 


জীবনটা ঠিক মে-মাসের খরা

লু-হাওয়া আন্ধির মতই


যখন আসে প্রচন্ড তীব্রতায় আসে 

ধুলিঝড় করে সব লন্ডভন্ড 


একটা ক্রোধ বাসা বাঁধে 

আসে প্রতিরোধ ক্ষমতা 


পাখির পালক খসে পড়ে 

ভেঙে পড়ে জানলা কপাট


আকাশ জুড়ে ধূসর পলেস্তারা 

জীবনটা ঠিক মে-মাসের কষ্টে ভরা 



সূর্যনগরীর গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে উঠেছে দিবাকর 

পথে ঘাটে 

মাঠে মাঠে 

আকাশে আকাশে 

আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ছোঁয়া ক্যাম্পাসে

এবং প্রাচীন মরীচিকাময় বিজ্ঞ চাতালে 


আকাশের কোনো এক কোণে কোথায়ও 

চাঁদটা নেই ---

 সেই কবে মরে গেছে ভোরে

আর আমার জুতসই কলমে ছুটে আসে 

বাঙ্ময় কবিতারা - 

লাইনে লাইনে দাঁড়ায় তারা


আর যাব না কোথাও 

কোনোখানে কোন পথে 

কথা দিলাম তোমাকে ---

 ওহে মৃন্ময়ী বাতাস

আমার উচ্চারণ জড়িয়ে এসেছে এখন 

জিহ্বাও প্রয়োজনমত নড়ে না আর


ভালোবাসা শব্দটি 

ভেঙে ভেঙে কেটে কেটে 

হাজার সহস্র টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে 

দূরে প্রান্তরে 

আর তোমার সংসারে 


কতভাবেই না এখন রাখা যায় ফোন

সাইলেন্ট মোড

ভাইব্রেশন মোড

ফ্লাইট মোড 


তোমার ঠোঁটে আঙুল চাপা ... 


এই মরু

এই পাড়া

এই প্রান্তর

এই পৃথিবী ছেড়ে যাবার আগে 

একবার বল অন্তত একটি শব্দ 


ভাঙো দলিত নৈঃশব্দ্য ... 


তারপর বদলে যাক ধর্ষণমুখর এই পৃথিবী 


দিন এখানে গভীরতা অভিমুখী 


দেয়ালের গায়ে গায়ে 

করিতকর্মা রোদের আস্ফালন 


এখানে স্বাধীনতা একান্ত স্বাধীন 

এই বুঝি সূর্য নগরী 


আমার চোখে নেই কোন পতাকা উড্ডীন 


যে দেয়াল উঠছে 

পাথরে পাথর 

একের পিঠে এক


সে জানে দৃঢ়তা 

জানে দায়বদ্ধতা 


ছায়া সরে গেলে 

তুমি সরে যাও


রাতের ছায়া 

দেয়াল জুড়ে 

অন্ধকারে 

বেশ লাগে 


একের পিঠে 

দোসর পিঠ

নেশা কলে 

শঙ্খ লাগে 


আকাশটার গা ছুঁয়ে বুঝি 

জায়গা অকুলান 


হাঁটতে নেমে রাস্তায় দেখি

ভাঙা ব্রীজ উঠে দাঁড়িয়ে 


তোমায় কল দেব 

মুঠোফোনে দেখি

অবান্তর হিজিবিজি 


সময়কে ডেকে বলি 

এসব হচ্ছেটা কী ... 


আকাশ দেখে মুচকি হাসে

দাঁত কেলিয়ে হাসে ভাঙা ব্রীজ 


মুঠোফোনে নীল আলোয় ভাসে 

নক্ষত্রখচিত মুখমন্ডল মুখশ্রী 

আর বলে আউট অফ রিচ


সময় হঠাৎ ধমক মেরে কয়

এসব হচ্ছেটা কী .... 



আজ গভীর রাতে কেউ বুঝি 

হাড়গুলো খুলে খুলে রাখল


বিছানায় ...


হাড়ের ফসফরাস জ্বলছিল 

যেন অসংখ্য ভুতুড়ে চোখ 


বিশ্বাস করো 

অবিশ্বাসের কোনো লোভ ছিল না 


কেউ কি কখনও অহংকারের মৃত্যু দেখেছে 

অহংকারের গলায় দড়ি 

অহংকারের এক্সিডেন্ট 

অহংকারের ক্ষয়রোগ

অথবা নিতান্তই অহংকারের স্বাভাবিক মৃত্যু 


অথচ মৃতের আত্মা বেশ দেখে অহংকার 

জানালায় মুখ রেখে 

ব্যালকনির দোলনায় 

সোফার নরম আহ্বানে 

অথবা নিতান্তই লংড্রাইভের সূক্ষ্ম আয়োজনে 


কেই-বা মৃত্যু চায়

অহংকারও চায় না

সে প্রতিবেশী - কিন্তু সে অমর


অহংকার দাহকার্যে পোড়ে না

অহংকার কবরে দফনে যায় না 


কি আর এমন প্রস্তাব

শুরু হতেই শেষ যার 

মাঝখানের সময়টুকু 

মাসের দিনগুলো 

শূন্যময় বৃষ্টিপাতহীন


শূন্য মাঠ পেলে

বাতাসও চঞ্চল হয়

কল্পনায় গড়া ভাস্কর্য 


কে কোন পথে যায় 

কারো হাতে আগুন 

কারো মুখে পান্ডুলিপি 

কারো ঠোঁটে বেসুরো গান 


যেখানে শুরু সেখানেই শেষ 

খানখান ভেঙে পড়ে 

ভাস্কর্য মাঠময় ঝড়ে 

কি যে কেমন প্রস্তাব

শুরু হতেই শেষ যার 


কিছু পেতে হলে 

কিছু ছাড়তে হয় --

এমন আপ্তবাক্য আজকে

পার্কের বেঞ্চিতে গড়াগড়ি খেল 


ফার্স্ট ফ্লোরের বারান্দায় ভীষণ 

জটিল সমস্যা সরলরেখায় 

নেমে আসে পার্কের পালিত ঘাসে 


আমাদের সান্ধ্যভ্রমণ বিষয়ক

গানগুলো এযাত্রা কোন 

মাত্রা পেল না বলেই 

এবার উঠি-উঠি করে একটা 

সমূহ উপন্যাসের গোড়াপত্তন হল


এবার রাত নেমে আসে 

টেবিলে ডিনার 


তারপর এক বিশেষ কায়দায় 

হিসেবনিকেশ 

এবং 

মোবাইলের নীল আলোয় মায়াজাল 



কী রঙ ব্যবহার করে ফোটাও তুমি ফুল

পাটীগণিতের অংকে এত কেন হয় ভুল


কখনও বাতসের রঙ এঁকেছ কি --

কখনও কি এঁকেছ 

গুনগুন গানের সুর

বা শরতের সকালের শিশির বিন্দু 

অথবা থরে থরে স্থির ভেসে থাকা কুয়াশা


কোন রঙ ব্যবহারে ফুটে উঠবে প্রেম

গোপনতা কীভাবে আসবে ক্যানভাসে 


বাতাসের নিজস্ব নির্মল গন্ধ ভাসে 

এমন রঙ আছে কি তোমার কাছে 


দুজনেই মেখে নেব মিশ্র রঙ

বড় কাছাকাছি মনে হবে তখন


সিঁড়ি ভাঙা অংকে কেন ভাঙলে সিঁড়ি 

কী রঙ ব্যবহার করে ফোটাও তুমি ফুল 


যতই উড়ি যতই উড়ি 

ততই থাকি ভারশূন্য


ইরার বুকে শুকনো পাতা

গাছের ডালে নতুন পাতা

উড়তে থাকি উড়তে থাকি 

ততই থাকি ভারশূন্য


কে বলে নেই ভাতের গন্ধ 

পাড়াময় গন্ধ ঘোরে ম- ম


গল্প আসে তোমার পাশে 

রোদের ডাকে ছায়াও আসে 

ছায়ার টানে বাতাস ঘোরে 


দুপুর পর উড়তে থাকি 

যতই উড়ি যতই উড়ি 


বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামে

তুলসী তলে প্রদীপ জ্বলে 


তোমার মুখে মায়ার আলো

উড়তে থাকি উড়তে থাকি 

ততই থাকি ভারশূন্য 


একই নৌকায় উঠে বসে আছি 

মোহ ও মৃত্যু পরম্পরা সহযাত্রী 


হিমেল ভোরে যখন শিউলি ঝরে 

পড়ে আছে সময়ের বিহ্বলতায় 


কত বোঝাপড়া আড়াল অন্তরালে 

গতিপথ বোঝে না উদ্ভ্রান্ত বায়ু

অবুঝ খতিয়ান মোহভান্ডারে


তুমি কি বোঝনি কখনও সমর্পণ 

নাকি বুঝেও সরিয়ে রেখেছ মন

এতদূর যখন এলে তবে একবার 

এবার খুলে রাখো মনের পোশাক 


আমরা দূরান্তের ছায়ায় গিয়ে বসি 

তুলে নিই অপরাপর ভাষা প্রয়োগ

 নিশ্চুপে কতই না কীর্তন মালা

তোমার চলাফেরা এই সংসারে 


মোহ জাগে জাগে মোহন বাঁশি

কোন সুর ফেলে তবু্ও জানো

সবেতেই অচেনা পরশ এসে বসে 


সে তো সহযাত্রী -- সে তো মৃত্যু 

একে অপরের বেশ বন্ধু মুখোমুখি 


দেখা হয় সকালবিকেল গোধূলিবেলা

কথা হয় উপসংহার সংক্রান্ত প্রশ্নে

দু'চার পংক্তি কবিতাও হয় এবেলা ... 



যতটা গভীরে যাই একটা অনন্য মুখ 

ভেসে ওঠে -- অলস ভাবে বেড়ে ওঠা

প্রকৃত ভাব -- যা কিছু দেখি সত্য নয়

চোখের পর্দায় ভাসা ভাসা প্রতিবিম্ব 


আজ সকাল সকাল বেড়াতে যাও

এভাবেই শুরু জীবনের এক জীবন 

তোমার আমার সুর-তাল-ছন্দ-মনন

অনিন্দ্য বৈভব সুকুমার এ যাত্রাপট


কাছে পিঠে কোথাও মধু বিহার

নাম মঞ্চ ধরে ধরে ফিরে আসা

বাংলা ব্যাকরণ ভীষণ অসুখে

কতটা রাত জেগে থাকলে বুঝি 

এনে দেবে সাফল্য কোথাকার 

শেষ ট্রেন চলে গেল রোজকার


বেঁচে যাওয়া রুটিরা আজ প্রগতিশীল 

যেন মনে হয় পরিকল্পিত অভিসন্ধি 

চেনা থাক যা কিছুই চিনে রাখার 



কতদিন অঝোরে কাঁদিনি 

কতদিন তেমন করে প্রণাম করি নি

কতদিন কতদিন তেমন কাউকে ভালোবাসিনি


প্রতিদিন দেখা হয় চেনা-অচেনা অসুখ যত

প্রতিদিন জমা হয় ক্ষয় হয় ব্যর্থ প্রয়াস

প্রতিদিন খোলা হয় ফেসবুক একাউন্ট 


তবুও চিনি না কাউকে তেমন

এমনকি তোমাকে 

কালরাত্রি আঁধারে ওত পেতে বসে থাকা 

যাপন ক্রিয়া 


ফলাফল যাই হোক কাঁদিনি বহুদিন 

প্রণাম প্রথা যথাযথ আছে কি নেই 

ভালোবাসা -- সে হিসেবের খাতায় 


এমনই এক জেগে থাকা নির্ঘুম রাতে 

হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ চলে -- ইর্ষা 



এভাবেই শেষ হয়ে যাবো নিশ্চিত জানি... 

সন্ধ্যার মোড়কে হাওয়া খেতে খেতে 

বসে বসে 

গল্পে গল্পে 

একটা হিসাবের ভাব চিত্র তুলে আনি


আজ থেকে ৫০ বছর পর যদি থাকতে পারি 

তবে হাওয়া কোনদিকে বইতে পারে 

চারা গাছগুলো মহীরুহ হবে 

হাওয়াদের আমল দেখবে

দেবে হিসেবে কবে এঁকেছিল ভবিষ্যৎ ছবি


মনে মনে তুলে নিই একটি সহজ অংক


তুমিও থাকতে পারো --

আর ঐ বালিকা ছুটে আসবে 

আমার হিমস্পর্শ ছুঁয়ে দাঁড়াবে 

এই শুকনো মরম হাওয়া সাক্ষী রেখে

দিই গ্যারান্টি -- আমি নিশ্চিত থাকবো না


সত্যি কেমন লাগে যখন ভাবি এই সন্ধ্যা 

এই পাথর চাতাল

এই মিহি বাতাস

এই ক্ষণিক অবসর

এইসব ... এইসব ... 


এই সময়ও যাবে মহাকালের গহ্বরে একসময়


সাহস হবে না-- হতেই পারে না 

ইচ্ছেও নেই ইচ্ছেটা চাগার দেয়নি


বারবার ধাক্কা বারংবার তোয়াজ উস্কানি

সবই ফালতু বেকার যায় 

আমার আর সুন্দর দরজাটি দেখা হয়না


যখন একের পর এক কবিতার পংক্তিমালা

গুছিয়ে তুলে এনে চমক দেব ভাবি

তার আগেই সে বেমালুম বন্ধ করে দেয় 

সমস্ত সম্ভাবনা বিস্তর আলাপ সংলাপ 


কবি ও কবিতার সময়গুলো কোথাও 

পড়ে থাকে যা কখনও স্বপ্নেও আসে না


জানি দরজার এপাশ ওপাশ থাকে 

একদিকে পৃথিবী অন্য পাশে না-পৃথিবী

যোগাযোগ বিন্দুমাত্র নেই 

কুৎসিত চিহ্ন চোখে লাগে বেজায় সৌন্দর্যহীন


অথচ বিস্ময়কর দরজা দ্রুত 

অধিক বিস্ময়কর হয়ে ওঠে সুন্দর ভাবনায়


যে পথটুকু ধরে আছি যাবোই যাবো বলে 

সে পথ আজ বড় বেশি বেপরোয়া 


কোন দিশায় পথ যাবে 

জানি না তুমি আমি কেউ 


পথ দেখছি ধার ধারে না কারো

আজন্ম সে পথ বরাবরই পথে


ঝড়জলবর্ষায় হরহামেশা সঙ্গ দেয়

শীতের কুয়াশায় বারবার হারায় সে


অমূলক কথা বার্তা তুলে আনে গরমকালে

মিছিলের মর্মবেদনা ঘাম রক্তে সেও কাঁদে


পথহারা মানুষের ভক্ত পথ

সে যাবেই তার বাঞ্ছিত পথে 


খোঁজ নিয়ে দেখা 

সে নিজেই হারিয়েছে দিশা বহুকাল আগে 



প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি দুপুরে 

এক বাটি তরকারি সহ তুমি আসবে


কলিং বেল বেজে উঠবে ঝনঝন 

পৃথিবীকে জানান দিয়ে সে বাজতেই থাকবে 


কলিং বেলের সুইচ বেশ অপেক্ষা করে 

তোমার নরম আঙুল স্পর্শে জেগে উঠবে 


আমি একান্ত হই --


আমার সজাগ চোখে আসে তন্দ্রা আবেশ

অপেক্ষা ধীরে ধীরে শীতকাতুরে হয়ে ওঠে 


জানিনা তোমার স্নেহান্ধ তরকারিতে 

আজ তেলনুন ঠিকঠাক পড়েছে কিনা 


কতটা বে-স্বাদ ব্যঞ্জন অভুক্ত 


আমার মগজ-মনন ক্রমশ ঢুকে পড়ে 

একটি অপ্রত্যাশিত নির্জন গুহায় ... 


দুপুরের রোদ সরিয়ে এই একটু এলাম

শরতের মেঘের মতো টুকরো টুকরো ভেসে


তোমার করতলে রাখা রহস্যময় গল্পের খোঁজে 

জালি-দরজার ওপাশে সহাস্যে আবেদন ছিল


শূন্য শূন্য - সব কিছু শূন্য আবেশ কিম্বা 

শূন্য নয় - ওসব বুঝি আপন মগজের হিসেব


কিছুটা ধোঁয়াশা সরিয়ে একটু ঝিলিক হাসি 

এ যাবত সংসার-মাঠ তোমারই একলা জনশূন্য 


কিছু একটা দেখবো বলে দাঁড়িয়ে পড়ি

সূর্যোদয় কিম্বা সূর্যাস্ত বেলা


কিন্তু একি ... সবকিছু কেন উল্টো দেখছি 

একটা ছায়া সেও নির্ঘাত উল্টো 


শেষবারের মতো দেখছি যাকে 

সে সর্বান্তকরণে উল্টো 


আর কিচ্ছু কি নজরে পড়ছে এবেলা

একটা নড়বড়ে কাঠের পুতুল ডুবছে 


একমাত্র তারই উল্টো-সিধে নেই 

সে ডুবছে সূর্যাস্তের বেলায় 


দেখবো বলে দাঁড়িয়ে পড়ি - একটা কিছু 


আমার চারপাশে মিশ্র আলাপ 

আর সন্দিহান চলাফেরা কিছু 


কোথাও জল নেই আনন্দ নেই স্বপ্ন নেই 

আছে জীবনযাত্রা মানচিত্র ভাঙা

সংসারে গা ডুবিয়ে ভেসে থাকা 


চড়ুইভাতি রোজকার মেঘহীন উঁচু আকাশে

তারাদের পাড়ায় থেমে আছে ঝুলঝিলিক 

কেউ নাচে - 

নাচের পুতুল ঘুরিয়ে কথা কয়


ঢেউ ভেঙে এই তুমি এলে -- 

সাবধান 

যতটা জোরে পারো পা চালিয়ে চলো

রাত নামার আগেই গ্রামপ্রান্তে দাঁড়াও 


শোনা যাচ্ছে কিছু দূরাগত মিশ্র আলাপ

অপরিচিত গন্ধে ভরপুর সন্ধ্যা ঘন্টা বাজে ওই 


যা ভাববার নয়     

তা ভাবতে থাকি

বিষয়টি বড় কথা নয়

মগজে নিউরনগুলোয় বহুরৈখিক দৌড়ঝাঁপ 

যেন আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের ডংকা বাজে 


কে কাকে থামাবে বোঝাবে

সময়ের সাথে বেগতিক সময়ের যুদ্ধ 

বোঝাপড়া বেশ জরুরি 

তৎপরতা আশু প্রয়োজন 


আপাতত এমন যুদ্ধ থেকে বাঁচবো

বাঁচাটা বড় কথা নয় 

কিছু কর্ম করে রেখে যাওয়া বিশেষ জরুরি 

এটাই বড় কথা বন্ধুরা 


এই যে কলমের নিব থেকে 

নেমে আসছে 

প্রতিনিধি অক্ষরমালা ডায়েরির পাতায় 

শব্দ-মন্ডল উৎস সন্ধানে না গিয়ে 

অর্থবহনকারী সময় ধরে দাঁড়ায় 


আমাদের কবিতাগুলো জলহাওয়া পেয়ে 

নড়েচড়ে ওঠে 

আর সুরেলা গান হয়ে ওঠে 



তারপর … তাহার পর


***


1 comment:

  1. খুব ভালো লাগলো। পড়তে পড়তে কেমন যেন একাত্ম হয়ে গেলাম।

    ReplyDelete