DEHLIJ

বঙ্কিমকুমার বর্মন

পালকের শিলালিপি









বুকের এই অজ্ঞানতা থেকে উড়িয়ে দিই শত সহস্র পায়রার রৌদ্রস্নান । আমি ঢুকে পড়ি পৃথিবীর কোনো প্রাচীনতম গুহায় । অনবরত খুঁজে চলি স্মৃতির সতেজ শরীর । কেবল রাত্রি সহায় বুনে রাখা শস্যের যুগপুরাণ । কামনার ফাটলে ফাটলে বৃক্ষের মহাকরণ । ললাটে আজন্ম বিস্তার চুম্বনের মদ । আঙুল ধরে হেঁটে আসে চেতনার সিঁড়িতে আলোর দেহভঙ্গিমা । মগজের নিদ্রায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের সংকীর্তন পোষাক খুলে দাঁড়ায় । মুমুর্ষ জাগরণের চূড়োয় ক্ষণজন্মা কুয়াশার শ্লোগান জাপটে ধরে । 


ছুঁড়ে দাও ডাস্টবিনে যত নোংরা ইশারা । প্রীতির হৃদয় সংকেত নিয়ে তাঁকাও একটিবার কষ্ট মুখের দিকে। কিছু নীরবতার বাঁধ ফিসফিস উঁকি দেয় কাজল কালো চোখে । একবার গোপন হওয়ার আগে অশ্রুর পেট চিরে তুলে আনি ঈশ্বরের ভ্রুণ । দীর্ঘ এই জনপদে ক্ষয়ে যায় বিস্মৃতির চাঁদ । এসো সম্পর্কের বারান্দায় আত্মবিশ্বাসের ত্রিভুজ গড়ি । মৌন বিকেলের রোদে পা ছড়িয়ে বসি । সুতো ছেড়ে উড়িয়ে দিই দু-একটি কিশোরী মেঘের দিন । অপ্রস্তুত কোথাও ছুটে চলেছে শান্ত কাগজের ভোর ।


ক্রমশ বিরতির সমীকরণে শুকিয়ে গেছে ফুল ও শুভেচ্ছা । বসে আছি  জীর্ণ পাতার কাছাকাছি । যথার্থ ভাষাহীন স্নেহের রংধনু হয়ে উঠছে একার অনুবাদ । ছায়া হীনতা দেহের বুদ্বুদ, কে এই চিনেছে জানালায় নৈশগীতি । মস্তিষ্কের ফুল হাহাকার নামালে প্রিয় আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঝুল বারান্দায় । নিমেষে মগ্ন স্বদেশ অজস্র নৌকার  যাযাবরতা নিয়ে চর্চা করে । জমে ওঠে অসম্পূর্ণ আত্মরেখায় নাভির অন্ধকার । শুধু অনাবিষ্কৃত যন্ত্রণার ব্যাকরণ থেকে লাফ দিয়ে ছুটে যায় খরগোশ জঙ্গলের চিরহরিৎ নিঃশ্বাসে ।


ঝড় জলে উড়ে গেছে নিঝুমতার পেক্ষাপট । নবীন প্রজ্ঞার ঘ্রাণ জড়িয়ে উর্বর হয়ে ওঠে বনপথ । খসে পড়ে দ্যাখো গাছের পুরোনো স্বর । খোঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রাণের দ্বৈত শক্তি কতকাল আঁকড়ে আছে আমাদের সত্তায় । এযাবৎ সেভাবে আমরা কিছুই করে উঠতে পারিনি । অনন্তের ফাঁকা মাঠ পাড়ি দেয় যাবতীয় ঋতুর আলাপে । এখানে প্রতিটি কোলাহল থেকে জন্ম নেয় নৈঃশব্দ্যের নির্বাণ । শেকড় চালিয়ে দ্যাখো প্রার্থনায় । কতটা প্রস্তুত থাকা যায় গার্হস্থ্য পাঠ্যসূচিতে । 


সাঁইজন্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোদ, জীবন প্রান্তরে । এসো আলিঙ্গন করি । হাতে হাত মেলাই । তাঁর তুমুল খরায় পুড়িয়ে দিই সময়ের বিপন্ন বোধ । সমস্ত উপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দিই চলো । অবেলার দৃশ্যপটে যেভাবে নদীর জীর্ণতা উঁকি দিচ্ছে, এই দ্রোহকাল গোপন রহস্য । দেওয়ালের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে স্নান করে নগ্ন বেলাভূমিতে পরিচয়হীন কাক । কেবা জেনেছে স্মৃতি সম্পদ । ঘরদোরে জমে থাকা শৈশবের গোধূলিকাল স্মৃতি, এইটুকু খুঁটে রাখি নীতির জপনামে । 

No comments