DEHLIJ

সম্পাদকীয়







অতঃপর করোনার দ্য এন্ড হতে হতেও হলো না , অর্থাৎ তৃতীয়-তরঙ্গের আগমন মনুষ্যজগতের কাছে আর একটি প্যাহেলি, আর এক রিউবিক্স কিউব সমস্যার সমাধানের থেকেও জটিল ও কুটিল রয়ে গেল । ঘর থেকে  ফুড়ুত করে উড়ে গেলো জানালারা , এখন শুধু ঘর ই দেওয়াল, দেওয়াল সমূহ নিয়ে ঘরঘর । মাইক্রোসফট বলছে,  ২০২২ আসছে, সার্ভার ভার্সন ।  এসো শ্যামল সুন্দর । দেহলিজ, শুধু শ্যামল নয়, সুন্দর, কোমল, দুধভাত ও মোলায়েম কাহিনী কথা নিয়ে ধীর পারে এলো ।  অর্থাৎ কোন ধামাকা নেই ।  
 

ধামাকা, করাও যাচ্ছে না । এমনিতে লক-ডাউন, রোজগার তলানি । আপনি, ভাল খাচ্ছেন, সবার বাগান নেই। সব্জী ফলে না । ফেসবুক, হোয়াটস এপ করে আর কতদিন চলবে ? স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠান, মল সমস্তদিগের অচল অবস্থা । যারা এতো দিন মুখোস পরে দিব্বি, কচর কচর করে চালিয়ে দিয়েছেন, তারাও আর মুখোস খোলার সাহস পাচ্ছেন না । এর মধ্যেও মৎস্য ধরা পড়ছে । এইতো, দিল্লির কালকাজি মাছ বাজারে কেউ চিল্লিয়ে উঠলো, "দাদা - এই যে, আড়াই কেজি,  এটা পদ্মার ইলিশ" । 


এই সময়, দিল্লি - অন্য মেজাজে ।  দিল্লি মানে,  রাজধানী ও রক্ত পাশে রেখে আম-আদমীর সঙ্গে মোলায়েম , শ্যামল, ও আম । কে যেন কাল বলছিলো, দিল্লি ধানের প্রদেশ, একসময় এই নামে পরিচিত ছিল । খাস ছিল । বিশ্বাস হয় ? 
 
এ কথা আর পুরাতন কি, দিল্লির বাঘমারা সাহজাদাদের আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি । তাদের যুদ্ধসজ্জা আর তরবারী যে কোথাও কাটছে না ।  কাটবে কি, দাগ ফেলতেই পারছে না । শুধু চায়ে পে চর্চা জারি রাখার জন্য ঋষি অরবিন্দ মার্গে দূরবীন বসিয়েছে । স্টেজ বানিয়ে কবিতা পড়ছে । একজন, শাহজাদী দূরবীনে চোখ রেখে বললেন, "ওই তো, ঐ যে কুতুবমিনার দেখা যায়" । দিল্লিরাজ স্বয়ং অরবিন্দ, ঠিক করে দিয়ে বললেন, "মামনী - ওটা কাটওয়ারিয়া-সরাই । ওখানে ইগনুর স্টাডি সেন্টার , আর যেটা দেখতে পাচ্ছো, ওটা একটা ভোডাফোনের মোবাইল টাওয়ার " । 

ইনফ্যাক্ট, কুতুবমিনারের আর প্রাসঙ্গিকতা কোথায় ? দৈনন্দিন জীবনে তার কি প্রয়োজন ? বরং একবেলা ফোনে কথা না বলতে পারলে , কারো ভাত হজম হয় না । আর যদি, ফেসবুক না করা যায় ? তবে তো ঘুমই আসবে না । 


এহেন, বাজারে আর কি ধামাকা, কি বা ধামা । হরে গড়ে চাল সেই দুই সের । আর কিই বা ধরবেন ? এইটুকু যে আশা । আশায় বাঁচে চাষা । আপনারা এখনো আমাকে ছেড়ে যান নি ।  আমার প্রতি ভরসা রেখেছেন - যেখানে আমি নিজেই দিল্লি থেকে একসময় পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম । মঙ্গারের বালি চুরি গেছে , তাস্বত্বেও - ক্রমাগত দেহলিজ ৫, দেহলিজ-৬, দেহলিজ-৭ বেরিয়েছে । আমিও জানলায় মুখ রেখে এখন দেখতে চাইছি দিল্লির মুখ, একজন দই-ওয়ালার মুখ । 


এই সংখ্যায়, আমি আরো কিছু নতুন - বলা যায়, আমার কাছে নতুন জিনিস চেষ্টা করলাম । "মঙ্গারে ছবিতা" ; ছবিতে কবিতা । কার্ল কেম্পটন, আমাকে দিলেন তার নবতম বইটিতে প্রকাশিতব্য কিছু ভিজুয়াল পোয়েট্রি । দিলেন দিল্লির চিত্রকর, নাট্যকার তড়িৎ মিত্র ছবিতে কবিতা ।  ফাইন । 

লিখা হলো, দীর্ঘকবিতা ; ২০০ লাইনের কবিতা নিয়ে দেহলিজে প্রথমবারের মতো লিখলেন - প্রাণজি বসাক । দিল্লির কবিতা এতোটা দীর্ঘ, এতোটা প্রস্থ , তার আয়তন অপেক্ষা বৃহৎ হলো, এই প্রচেষ্টা ।  এই ট্রপিক্যাল রুক্ষ হরিয়ানভি পরিবেশে - বাংলা কবিতা লেখা । সঙ্গে রয়েছেন, দিল্লির বাংলা কবিতা,  রিপ্রেজেন্টেশনে । রয়েছে যথারীতি হিন্দি কবিতা, অনুবাদ কবিতা, ও অরিজিনাল ইংরাজী - ইয়াং মাইন্ড । 

যথারীতি, বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গের কবিবন্ধুরা উজাড় করে দিয়েছেন ভালোবাসা ।  গল্প,কবিতা,কবিতা নিয়ে ভাবনা, বাংলা মূল ভূখন্ডের বাংলার গন্ধ । বাংলা কবিতায় নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে, রিউবিক কবিতার গঠন প্রকৃতি নিয়ে লিখলেন কবি অনিন্দ্য রায় । বাংলা ভাষার মূল ও সোর্স নিয়ে এক প্রামান্য প্রবন্ধ দিলেন বন্ধ আলী আফজাল খান ।  এই সব অপার্থিব প্রেম, হৃদয় কে শান্ত করে ।   

এই দিল্লি, খানিকটা শান্ত, অনেকটাই কোমল । এর বুক চিরে সে নিঃশব্দে মেট্রো চলে যায়, মনে হয় মুঘলের শেষ সাম্রাজ্য মুছে দিয়ে যাবে । আমাদের প্রিয় রায়-পিথোরার ঢিবিতে অষ্টম বারের মতো গড়ে উঠবে পৃথ্বীরাজের স্বপ্নরাজ । স্বপ্ন দেখা ভালো । তাতে নদী পরিষ্কার হয় । 

আমাকে দেহলিজের জন্য, যথারীতি বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকেন , আমার কবি-বন্ধু মোনালি রায়, ঝুমা চ্যাটার্জী, মৌমিতা মিত্র । বিশেষ পরামর্শ দেন দিলীপ ফৌজদার ।  এছাড়াও দিল্লির অন্যান্য বাঙালি কবি , লেখক, পাঠকগণ নিয়মিত উৎসাহ প্রদান করায় আজকের এই দেহলিজ-৮ দাঁড় করানো সম্ভব হলো ।  তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার মত এত সুন্দর প্লাটফর্ম আমি আর পাবো না । 

ধন্যবাদ ।


পীযূষকান্তি বিশ্বাস ।
২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ । 
মহাবীর এনক্লেভ,  নিউ দিল্লি , ১১০০৪৫




1 comment:

  1. সম্পাদকীয় 👍👍--ইহ দিল্লি--ইহ তিষ্ঠ--এই ঘটস্থাপনা👍--কলম জারি থাকুক--নো সান্ধ্য আইন,নো ফ্ল‍্যাগ মার্চ--সারাদিন কেবলই গন্ধবহ সুবাতাস প্রবাহিত---
    শারদ শুভেচ্ছা সহ--কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য

    ReplyDelete