DEHLIJ

পীযূষকান্তি বিশ্বাস

পীযূষকান্তি বিশ্বাসের অনুবাদ কবিতা

 মূল কবিতা - আনন্দ ঠাকুর ।





আনন্দ ঠাকুর ১৯৭১ সালে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সন্দীপ ঠাকুর ছিলেন একজন সেতার উৎসাহী এবং প্রয়াত ওস্তাদ মোহাম্মদ খান বেনকারের শিষ্য। ছোটবেলায় তিনি হিন্দু পুরাণ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং নৃত্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার দাদী, কপিলা ঠাকুর ছিলেন একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত গুজরাটি শিশু লেখক এবং অনুবাদক।

আনন্দ ঠাকুর ভারতে এবং যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠেন। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় মুম্বাইয়ে কাটিয়েছেন। তার প্রকাশিত কবিতার সংকলনের মধ্যে রয়েছে ডিসেম্বর (2001), এলিফ্যান্ট বাথিং (2012), মুঘল সিকোয়েন্স (2012), নির্বাচিত কবিতা (2017) এবং সেভেন ডেথস অ্যান্ড ফোর স্ক্রল (2017)। একজন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী, তিনি তার জীবনের অনেকটা হিন্দুস্তানি কণ্ঠসংগীতের অধ্যয়ন, কর্মক্ষমতা, রচনা এবং শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছেন। তিনি ওস্তাদ আসলাম খান, পণ্ডিত বাবন হালদঙ্কর এবং পণ্ডিত সত্যশীল দেশপান্ডের কাছ থেকে বহু বছর ধরে সংগীত নির্দেশনা পেয়েছিলেন। তিনি হারবার লাইনের প্রতিষ্ঠাতা, একটি প্রকাশনা সমষ্টি এবং ক্ষিতিজ, সংগীতশিল্পীদের জন্য একটি ইন্টারেক্টিভ ফোরাম। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ করেছেন এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং চার্লস ওয়ালেস ইন্ডিয়া ট্রাস্ট থেকে অনুদান পেয়েছেন। তিনি মুম্বাইতে থাকেন এবং লেখালেখি, পারফরম্যান্স এবং সংগীত শেখানোর মধ্যে তার সময় ভাগ করেন। সেভেন ডেথস অ্যান্ড ফোর স্ক্রলস নামে তাঁর চতুর্থ শ্লোক সংকলনটি সম্প্রতি জয়দেব জাতীয় কবিতা পুরস্কারের জন্য শর্টলিস্ট করা হয়েছিল।



মুদ্রাপিঠ

( দীপঙ্কর খিওয়ানির জন্য )


যেহেতু, আপনি কখনো দেখতে পাবেন না যে  

এক্ষুনি আমি  যে  লাইনটি  লিখতে বসেছি:

আমার মোবাইলের স্ক্রীনে ভেসে উঠেছে একটি ছবি -

একটি পাশ-ফেরা মুখ 

গ্রেট কনস্টানটাইনের যুগের কোন একটি মুদ্রার উপর;

পুষ্পসজ্জিত একটি মস্তক আর একটি অশুভ চাহনি নিয়ে

একজন মানুষের ছবি ; 

যাকে - অবশ্যই  

জীবিত কেউই সম্ভবত দেখতে পেতেন না।


মুদ্রাটি কি মাঝি-মল্লারদের জন্য, আনন্দ ? 

আমি সত্যিই এইসবের ধারেকাছে কোত্থাও নেই এখন ...


হুম ... প্রত্যাশা অথচ যেমন প্রত্যাশা! 

মেরে দোস্ত, আমি আন্দাজ করতে পারছি আপনার পরিভাষা 

আপনার শৈশবের ভালোলাগা হেলেনীয় প্রেম - 

না দাঁড়ান, আমি আগে মনে করিয়ে দিই আমাকেই,

এই কথাটি আপনি বলছেন না ,

আমিই কেবল বলে চলেছি নিজের ভাবনার কথা 

যা হয়তো আপনি কোনদিন নিজেকে বলে থাকতে পারেন ।


আমি আপনাকে এই মুদ্রাটি দেখাতে চাই,

এই মুদ্রিত চেহারার প্রতিচ্ছবি,

যদিও এটি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে - যদি আমি পারতাম - 

দেখাতাম, আপনি এখন যেখানে থাকেন 

আপনি হয়তো বা এটা পছন্দও করতেন ... 


আপনি, বলেছিলেন যে আমি আপনাকে কখনও দেখতে পাবোনা,

কারণ দেখার মতো করে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকিনি;

কারণ প্রতিবার আপনার চোখ কিছু বলবার চেষ্টা করছিল

আপনার ঠোঁট থেমে যাচ্ছিলো ।  আমি দেখছিলাম পাশে বসে ।

আমি চাই, আপনি জানুন

কারণ আপনি কোনদিনই এই সমস্ত দৃশ্য দেখতে পাবেন না 

সেই কারণে আমি আজ এই মাত্র কয়েকটি লাইন লিখে রেখে গেলুম ।



সুনামি


বিশ্বাস করুন,

আমি একথা বলতে চাইনি।

আমি বিশ্বাস করি, কপাল ও ভগবান যদি চান   

সমুদ্র আমাকে সেখানেই নিয়ে যাবে

যেখানে আমার একদিন পৌঁছানোর কথা ছিল ।

যতই সমুদ্রতট অভিমুখে হেঁটে যাই অথবা যাবো বলে অলস বসে থাকি   

কোনটাই আমার ভাগ্যকে বদলাতে পারবে না । 


আমি বরং ভয়ে ভয়ে শুরু করি,

সমুদ্রতরঙ্গে ফেনাময় তাণ্ডব নৃত্য দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে  ,

যেদিকে তাকাই, কোন কুল কিনারা নেই 

মনে হয় সহস্র সমুদ্রতরঙ্গ একস্থানে মিলিত হয়েছে 

এবং সত্যি দুঃস্বপ্নেও এমন চ্যাংদোলা দেখিনি 

কোনদিন ভাবিনি সমুদ্র আমাকে আলাদা এমন কোন দূরদৃষ্টি দেবে

অন্তত: তার দিকনির্দেশে আচমকা কোল থেকে তুলে নিয়ে 

আমার সন্তানসন্ততিদের আছড়ে ফেলবো জলাভূমিতে

জলের নরম থাবায় আমি চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলবো ঘরবাড়ি 

না, আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারছি না

এই সব ভেঙ্গেচুরে যাওয়া সমুদ্রতট,

চূর্ণবিচূর্ণ ধ্বংসস্তূপগুলির ভিতর আমি বিধ্বস্ত নিজেকে দেখতে পাই

অথবা এটাই অন্তিম-যাত্রা, অন্তত:   

আমি ভাবি, একটা সুযোগ আমার কাছে ছিলো

একটা সার্থক জীবনযাত্রার

একটা এমন যাপন যা সমুদ্র থেকে পৃথক,

অথচ আমি রয়ে গেলাম অভিশপ্ত প্রেতাত্মার মতো 

যারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো তাদের হয়ে কিছু বলবার জন্য 

সমুদ্রতটে কবর দেওয়া সেই ভয়াবহ আবহকে ভুলে যেতে চেয়েছিলো

তবুও এখন আমাকে বলতে দিন,

সেই সব উপকূলের সন্তানসম্ভবা মহিলারা, মৃত মানুষের উত্তরসুরীগণ

সেই সব শিশুদের আমি আপনাদের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলাম

সেই সব শস্যক্ষেত্র আমি ধূলিসাৎ করেছি, 

সেইসব পালিত পশুপাখি আমি খুন করেছি

আমাকে শুনুন এবং দেখুন আমি এখন কতটা নম্র ভাবে কথা বলছি:

গর্জন নেই । কোন হুঁকার নেই  ।

কোনও উচ্চস্বরে চিৎকার নেই, চোখে নেই কোনও অশ্রুধারা,

নেই কোন অকস্মাৎ ঝঞ্ঝার ও ফেনিল সুনামির আভাস ;


আর নেই সেই আচমকা ফুলে ওঠা জলোচ্ছ্বাস, কুটিল চন্দ্রমালার অলংকারভাষ্য

যা আমাকে সংক্ষেপে শিখিয়েছে নিজের উচ্চারণ 

সমুদ্রযাপন থেকে বরং অনন্যকিছু যা আমায় জারিত করেছে

সেইসব ছেড়ে যাওয়া প্রিয়তম বন্ধুগণ, নিমজ্জিতদের প্রেমিকেরা

তবুও আমাকে শুনুন , যখন আমি বলছি  এই ব্যাপারে আমার কোন বলার ইচ্ছাই ছিলো না । 



ত্রয়ী


সুতরাং, এখন আপনি আমাকে সাত সাগর তের নদী থেকে কল করবেন আমাকেই মনে করিয়ে দিতে

যে আমার প্রয়াত বন্ধুটির জন্য শোক কেবল আমার একার জন্য নয়,

এই শোক আপনারও -

যদিও পারস্পারিক সম্পর্কগুলি আপনাদের মধ্যে তেমন সুমধুর ছিলো না 

এবং গত বিশ বছরে আপনারা দু'জন কথাও বলেননি।

আমি বুঝতে পেরেছি: দুঃখ প্রকাশের জন্য আপনি হারানো অধিকার পুনরায় দাবি করছেন,

এবং আমাকে বলছেন - যদিও অবশ্যই আপনি এটি উল্লেখ করেননি -

যে আমাদের ভিতর এইরকম অগণিত বিষয় নিয়ে দেওয়া-নেওয়া করেছি, আপনি এবং আমি -

টারকোভস্কি, টলকিয়েন, সরিষার সসে নদীর জলে ধরা মাছ,

নৌকা চালানো, চর্মসার ডুবানো, অঝোরে বৃষ্টি,

একই থেরাপিস্ট, গ্রিমক্র্যাক হোটেলগুলিতে একই সস্তা কামরা -


আমাদের এখন ভুলে যাওয়া উচিত না

একজন মৃত ব্যক্তির অতৃপ্ত এইরকম অপ্রত্যাশিত সদস্যকে

এখন আপনি তাকে  আদর করতে চান, সম্ভবত,

আপনি যখন এটি পড়বেন, আপনার ঘরে একা

আপনার ল্যাপটপের স্ক্রিনে, ঘরের লাইটগুলি স্যুইচ অফ করে দেওয়া হয়েছে,

সেই স্তনগুলি আমি যা কখনই ছোঁয়াছুঁয়ি করার মতো অবস্থায় ছিলাম না  -

যদিও আমি চেষ্টা করেছি, বিশ্বাস করুন -

সম্প্রতি মৃতের সঙ্গে ।



মূল কবিতা


Mr. Anand Thakore,


OBVERSE

for Deepankar Khiwani



Because you will never see this I now write this line:

the image on my mobile screen –

one side of a face

on a coin from the age of Constantine the Great;

the wreathed head and sinister single eye 

of a man whom – of course –

no-one alive could possibly have seen.


A Coin for the boatman, Anand? – I’m well beyond that now...


Hmm...a retort, as expected! I sense your wit, my friend,

Your boyhood love of the Hellenic – but no, I remind myself,

this isn’t you speaking,

just me mumbling to myself the sort of thing

you might have said.

I want to show you this coin,

this printed face in profile,

though it seems unlikely – even if I could – 

that where you now are

such things continue to interest you...


you, who always said I could never quite see you,

because I never paused long enough to look;

because each time your eyes were about to say something

your lips couldn’t say, I looked aside.

I want you to know:

it is because you will never see them

I now write these lines.



TIDAL WAVE



Believe me, 

I didn't mean to do this. 

I believed, with the seers and ecstatics, 

That the sea would bring me 

Where I needed to arrive, 

That no amount of lunging shorewards or holding back, 

Could alter anything about to happen. 

I began as a tremor, 

A shudder in the brooding loins of the sea, 

That set me moving to no visible end. 

Her sway seemed to hold all motion in place 

And I dreamed of nothing that breathed beyond her skin, 

Was granted no visions, as she urged me on –

Spurring me out of her, yet tightening her grip –

Of the fields I would swamp, the children I would drown, 

The homes I would crush with soft claws of water.

Nor could I tell,

As those doomed coasts drew near, 

That in their ruin lay also my own;

Or the end, at least, 

Of the only chance I thought I had 

Of being truly born,

Of being anything more than an aspect of sea. 

Unspawned, I remain now as ghosts remain, 

A voice in the veins of those who survived me 

That clings to a theme they long to forget –

Yet hear me now, 

Women of the coast, offspring of the dead, 

You whose progeny I snatched from your arms, 

Whose crops I wrecked and whose cattle I killed, 

Hear me and see how softly I speak: 

No roar. No crash. 

No surging crescendo, no deafening cascade, 

No rapt interjections of spindrift and surf; 

And no more of that turgid, moon-depraved magniloquence 

That brought me briefly to believe myself 

A being apart from the sea that bore me. 

Friends of the departed, lovers of the drowned, 

Hear me when I say I had no will in this matter.


   

THREESOME


So now you call long-distance to remind me

My late friend is not just mine to mourn,

But also yours –

Though things turned sour between you,

And the two of you haven’t spoken in twenty years. 

I understand: you wish to reclaim a lost right to grief,

And to tell me – though, of course, you do not mention this –

That in the great list of things we have shared, you and I –

Tarkovsky, Tolkien, riverfish in mustard sauce,

Boat rides, skinny dipping, rain,

The same therapist, the same cheap rooms in grimcrack hotels –

We must not now forget to include

A dead man’s insatiable, irretrievable member.

You will want to fondle them, perhaps, 

When you read this, alone in your room 

On your laptop screen with the lights switched off,

The breasts I could never quite bring myself to share –

Though I tried, believe me –

With the recently dead.



1 comment:

  1. অনন্য অনুবাদ, ভালোবাসা অকৃত্রিম জানবেন

    ReplyDelete