DEHLIJ

চয়ন ভৌমিক

 

কালি ফুরিয়ে যাওয়ার একটু আগে 




১)


কোনো কোনো দিন রোদ ওঠে সকালে। রাধাচূড়া গাছের সব থেকে উপরের ডালে এসে বসে ত্রস্ত আলোরঙের মাছরাঙা। সেদিন তাকিয়ে থাকা শেষ হয় না। আমি দেখি সাইকেল চালাচ্ছে মিতালি মজুমদার। আবছা দূরত্বে উড়ছে ভিজে কাপড়ে মাখা অগোছালো নির্ঘুম রাত। 


কোনো কোনো ভোর হাসতেই থাকে। সবকিছু মনে হয় টেলর মেড। ঝালর দোলায় বাতাসের পালক। সাইনবোর্ডগুলো চকচক করে নীল আকাশের মায়ায়।


সেদিন টিফিনে লুচি হয়। রেডিওতে ফিরে আসে চেনা গান। মিতালি মজুমদার বাঁক নেওয়ার আগে আড় চোখে তাকায়, অন্তত একটি বার। মনটা কেমন যেন ভালো হয়ে যায় আচমকাই।


২) 

আমাকে সে বৃষ্টি ফেরত দিয়ে হারিয়ে গেল জনারণ্যে। এরপর কীই বা আর লেখা যায়। এ'জন্যই আমি ফিরে যাই অতীতে - জানো তো! লুকিয়ে পড়ি, শৈশবের টিফিনবক্সে, স্কুলব্যাগে, ডুমুর গাছে বানানো টুনটুনির বাসায়। 


আমাকে সে বৃষ্টি ফেরত দিল, কিন্তু বলে গেল না, কোথায় রাখব এত মেঘ, বজ্রপাত ও চোখ ঝাপসা করে দেওয়া অঝোর। আমি ভবিষ্যতের দিকে মুখ ঘুরালাম। আমার ভিজে যাওয়া সমস্ত পোশাক নিয়ে আমি হেঁটে চলেছি ডাকঘরের দিকে। আমার জমিয়ে রাখা সমস্ত চিঠি দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নীলাভ রক্ত। মিশে যাচ্ছে ছুটির পর নেমে আসা, নিকষ কালো রাতে। 


৩)

এই দো-আঁশলা জীবন নিয়ে জমিয়ে বসেছি আমি। আমার কান ঝোলা, দেশী সাদা কালো লোম কিন্তু লেজ ঝালরের মতো। আমি চেয়েছিলাম, দেশীরা আমার সাথে থাকুক। কিন্তু আমি না ঘরকা, না ঘাটকা হয়ে লটকে গেছি মাঝখানে। ঘরকুনো মানুষের মতো, বক্তব্যহীন আমি। দেখছি ভাদ্র মাসে রোদ, বৃষ্টি ও ছায়ার ভিতরে - মেটিং চলছে আরো দো'আঁশলা তৈরীর।


2 comments:

  1. খুব ভাল লাগলো। অনায়াস, সাবলীল, গভীর ও।

    ReplyDelete